‘শিবির বলে চরিত্রহননের চেষ্টা’ হচ্ছে, অভিযোগ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের

আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সমন্বয়ক সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী তন্ময় আহমেদ অভিযোগ করেছেন, ‘ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত’ কয়েকটি ফেইসবুক পেইজ থেকে তার ‘চরিত্রহননের চেষ্টা’ হচ্ছে কিছুদিন ধরে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2021, 05:34 PM
Updated : 20 July 2021, 05:37 PM

তিনি বলেছেন, সম্প্রতি ফেইসবুকে নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিলের করা এক মন্তব্যেও তাকে উদ্দেশ্য করে 'সাবেক শিবির কর্মী, বর্তমান সিআরআই কোঅর্ডিনেটর' বলা হয়েছে।

আর ঢাকা ২৪X৭ নামে একটি ফেইসবুক পেইজ থেকে এক স্পন্সরড পোস্টে তন্ময়কে ‘শিবির’ আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সেকেন্ড ইন কমান্ড সাবেক শিবির কর্মী তন্ময়!’

গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলায় হাই স্কুলে এবং ঢাকার সেন্ট জোসেফ কলেজে পড়ার সময় তিনি ‘শিবিরের সাথে জড়িত’ ছিলেন দাবি করা হয়েছে ওই পোস্টে, যা ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময়।

তিনি বলেন, “তাসনিম খলিল সুনির্দিষ্ট কারণেই এমন প্রচার করছে। সে এ ধরনের গুজব ছড়ালেও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থানে থেকে কোনোদিনও প্রমাণ করতে পারবে না আমি বা আমার পরিবারের কেউ শিবির করেছে। আমাকে শিবির প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে কিছুদিন পর হয়ত আমার চরিত্রহননের জন্য অন্য কোনো মিথ্যাচার নিয়ে সামনে আসবে তারা। তাতেও কোন লাভ হবে না।”

শিক্ষার্থী জীবন থেকেই ‘জামায়াত-শিবিরের অপপ্রচার দেখে এসেছেন’ মন্তব্য করে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তন্ময় বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে নেতিবাচক অপপ্রচার চালায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সরাসরি তারা এসব মিথ্যা-বানোয়াট কথা প্রকাশ্যে বলতে থাকে।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়েও অসংখ্যবার বিভিন্ন মিথ্যাচার চালিয়েছে জামায়াত শিবির। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের জনপ্রিয়তা হ্রাসের জন্য তারা যেই অপপ্রচার চালাত, এখনও তা চালাচ্ছে। আগেও দেখেছি, হামলা করার আগে চরিত্রহননের জন্য এ ধরণের অপপ্রচার চালাতে।”

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাসনিম খলিল লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আমি কোনো অভিযোগ করিনি। তন্ময় আহমেদ স্কুল জীবনে শিবিরের সদস্য ছিলেন এবং পরে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ছাত্রলীগে যোগ দেন, এই কথাটি আমি প্রথম শুনেছি তার জেলার একজন প্রাক্তন শিবির নেতার কাছে। পরে ফেইসবুকে কিছু পোস্টও দেখেছি। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হল, সবারই রাজনৈতিক মত-পথ পরিবর্তনের অধিকার আছে, তন্ময় আহমেদেরও আছে।” 

তন্ময়কে নিয়ে ফেইসবুকে করা ওই মন্তব্যও ‘শুনে করা’ কি না- সেই প্রশ্নে খলিল বলেন, “হ্যাঁ। আজাদ ফেইসবুকের একটি কমেন্টে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি যা জানি সেটাই উত্তর দিয়েছি। আপনি যে বলছিলেন আমি অভিযোগ করেছি, তেমন কিছুতো নয়।”

এসব বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা ২৪X৭ নামের ফেইসবুক পেইজ পরিচালনাকারী কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুস সবুর বলেন, “তন্ময়কে আমি আগে থেকেই চিনি। সে স্কুল জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠেছে। ২০১৩ সালে যখন ছাত্র শিবির, হিজবুত তাহরীরসহ নানা জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় ছিল, এবং তন্ময় আহমেদ গণজাগরণ মঞ্চে এবং এই ছাত্রশিবির, হিজবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল। সেজন্য তার বাড়ি পলাশবাড়িতে শিবিরের জঙ্গি হামলায় সে গুরুতর আহত হয়।”

সবুর বলেন, বুয়েট থেকে পাস করে তন্ময় আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন এবং পরে সিআরআইয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে তিনি ‘দায়িত্বশীল ভূমিকা’ পালন করে চলেছেন।

“সেই জায়গায় যারা অতীতে শিবির সংশ্লিষ্ট ছিল, তারাই এই অপপ্রচারে নেমেছে।… এই অপপ্রচার করে তন্ময় আহমেদসহ আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর কণ্ঠ রোধ করা যাবে না।”

২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চে সক্রিয় তন্ময়ের ওপর গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে হামলা হয়। তখন তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষবর্ষের ছাত্র।

গুরুতর আহত তন্ময়কে সে সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় এক শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর প্রধান বলেন, “২০১৩ সালের ৮ অগাস্ট শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত হয় আমাদের এলাকার ছেলে তন্ময় আহমেদ। তার পরিবার এবং সে সবসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছে। তার চাচা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি ছিলেন।

“এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তন্ময়ের চাচা এবং আমি এক সঙ্গে আন্দোলন করেছি। সে সময় তার হাতে গুলি করা হয়েছিল। তার বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা সর্বদা আওয়ামী ঘরনার মানুষের সঙ্গেই চলেছেন। যে ছেলেটা শিবির ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করার জন্য মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে পড়ে ছিল শিবির কর্মীদের হামলায়, তাকে কীভাবে ‘শিবির’ বলছে আমার জানা নেই।”