ক্ষমা চাইলেন রাশেদ, কমিটি বহালের ঘোষণা নূরের

রাতে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়ে দিনে আবার দুঃখ প্রকাশ করে মীমাংসার কথা বলছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2021, 12:14 PM
Updated : 4 July 2021, 12:21 PM

পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে `সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে শনিবার মধ্যরাতে ফেইসবুকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর।

নূরের ওই ঘোষণাকে 'চরম অসাংগঠনিক কার্যকলাপ' আখ্যায়িত করে পাল্টা তাকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়ার কথা জানান আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন।

রোববার বিকালে মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডি থেকে ক্ষমা চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টিকে ‘নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে বলে দাবি করেন।

রাশেদ খাঁন লেখেন, “দেশের মানুষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা বয়সে তরুণ, যে কারণে মাঝে মাঝে বক্তব্য, কথা, কাজের মধ্যে ভুল করে বসি। নূর ও আমার মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেটা আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর সমাধান হয়েছে।

“দেশের মানুষকে আমরা অভিভাবক মনে করি। আমাদের ভুল হলে অবশ্যই সমালোচনা করবেন, পরামর্শ দিবেন, যাতে শুধরিয়ে নিয়ে নিজেদের পরিপক্ক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। ভবিষ্যতে নিজেরা চলার পথে আরও বেশি সতর্ক থাকব।”

নূরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা জানিয়ে রাশেদ লিখেছেন, “নুর ও আমার মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিন থেকে সুসম্পর্ক ছিল, ভবিষ্যতেও  সম্পর্ক ধরে রেখে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।"

রাশেদ খাঁন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু আমরা বিষয়টি মীমাংসা করে নিয়েছি, কমিটি বহাল থাকছে। আমি ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবেই থাকছি। তবে শিগগিরই আমরা কাউন্সিল দিয়ে দেব।”

নুরুল হক নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। তাই আমরা পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে এটি মীমাংসা করে ফেলেছি। কমিটি বিলুপ্তির বিষয়ে যে ঘোষণা ছিল, তা উইথড্র করে নিচ্ছি। শিগগিরই প্রেস রিলিজের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।”

৩০ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, তা বহাল থাকবে বলে জানান নূর। এই সময়ের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে নুরুল হক নূর নিজেকে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের 'সমন্বয়ক' দাবি করে শনিবার মধ্যরাতে ফেইসবুকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, গত ২ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ সভায় কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। একইসঙ্গে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে’ কমিটি গঠন করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এরপর পাল্টা এক বিজ্ঞপ্তিতে রাশেদ খাঁন বলেন, “যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নুরুল হক নূরের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার নেই। ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ পদবি ব্যবহার করায় নূরের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই মর্মে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।”

রাশেদ বলেন, ২ জুলাইয়ের সেই যৌথ সভায় তিনি নিজে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির ‘অনেকে’ উপস্থিত ছিলেন না।

সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে রাশেদ খাঁন আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমরা মনে করছি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর চ্যাটিংয়ের জন্য কমিটি বিলুপ্ত করা সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাব। নূরের কথায় বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করছি।"

তখন নুরুল হক নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ফেইসবুক মেসেঞ্জারে একটি চ্যাট গ্রুপে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা, বিশেষ করে আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেন কিছু স্পর্শকাতর কথা বলেছে। যেখানে দলে ভাঙন সৃষ্টি ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। সেগুলো আবার সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

সরকারি চাকরির কোটা সংরক্ষণের বিরোধিতায় গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ২০১৮ সালে আলোচনায় আসে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। পরে এর নাম পাল্টে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ করা হয়।

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন এ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর। পরে তাকে মূল ধারার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মিলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের এক শিক্ষার্থী গত বছর ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা, চরিত্র হনন ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন, যেখানে নুরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

মামলা হওয়ার পর গত বছর অগাস্টে রাশেদ খাঁন ও নূরকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটির একাংশ। সংগঠনের পুরনো নাম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে’ ফিরে যাওয়ার কথাও তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়।