অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন: তথ্যমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও বর্ণবাদ নিয়ে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 12:24 PM
Updated : 18 Jan 2021, 12:24 PM

সোমবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার ‘উপস্থিতি রয়েছে’ বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আল-কায়েদার কোনো উপস্থিতি নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অজ্ঞতাপ্রসূত যখন এই বক্তব্য রাখেন সেটি খুবই দুঃখজনক। সরকারের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

“আমি মনে করি, আজকের বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে সহিংসতা দেখা দিয়েছে, পার্লামেন্ট হামলা চালিয়ে সেখানে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আমাদের দেশে কিংবা ভারতে বা আশপাশে কোনো দেশে এভাবে পার্লামেন্টে যখন অধিবেশন চলছে তখন কি হামলা হয়েছে? হয়নি।”

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে চলেছেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। তবে তার এই জয় মেনে নিতে নারাজ প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা এরইমধ্যে কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালে ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছেন, যাতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।   

এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের অভিষেক সামনে রেখে রোববার দেশটির স্টেটগুলোর ক্যাপিটল ভবনের কাছে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে সশস্ত্র অবস্থায় অনেককে দেখা গেছে।

আগামী বুধবার বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের দিনও দেশজুড়ে সশস্ত্র বিক্ষোভ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করবেন, এফবিআই তথ্য দিয়েছে সেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সারা দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়াতে পারে, বিক্ষোভ হতে পারে।

“যে কোনো দেশে সন্ত্রাসবাদ দমন আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব এবং লক্ষ্য। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি, তাদের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।”

যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘অনেক ভালো’ কি না প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, “আমাদের দেশে কিংবা ভারতে সংসদে অধিবেশন চলাকালে উত্তেজিত জনতা কি ইতিহাসে কখনও এভাবে হামলা চালিয়েছে, যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে? সেই বিবেচনায় তো আমাদের সংসদে এ ধরনের কোনো হামলা হয়নি।

“এই বিবেচনা থেকে যে উপসংহার আসে সেটি কী বলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমি মনে করি বর্তমানে তাদের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ এবং বর্ণবাদ এই দুইটি বিষয়ে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।” 

ভোট নিয়ে বিএনপির অভিযোগ ‘মুখরক্ষার’

পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘ভোট ডাকাতি’ করে জয়ী হয়েছে বলে যে অভিযোগ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করেছেন, তারও জবাব দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “এ ধরনের বক্তব্য বিএনপির দেওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ তারা জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাদের মুখ রক্ষার জন্য বক্তব্যটি দিয়েছে। তারা যে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে প্রথম দফার নির্বাচনে ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে, এই দুর্বলতা ঢাকার জন্য এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব।

“তাদের অনুরোধ জানাব, বাস্তবতাটা অনুধাবন করার জন্য। তারা যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন এবং উপজেলা পর্যায়ে পৌরসভা পর্যায়ে তাদের যে সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে সেই বাস্তবতা মেনে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। তাহলে বিএনপি লাভবান হবে। এরপরও বিএনপি বেশ কয়েকটি আসনে জয়ী হয়েছে, এজন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।”

দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভায় নির্বাচনের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এই নির্বাচনে যত ভোট পড়েছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট  আওয়ামী লীগ পেয়েছে। বিএনপি পেয়েছে ১৮ শতাংশ। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুলভাবে জয়লাভ করেছে। চার জন বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন এবং তারমধ্যে একজন বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছে। অন্যান্য দলের মধ্যে জাসদ, জাতীয় পার্টির একজন করে নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ৪৬ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।”

বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে সহিংসতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “যেটি বলেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কথা। এ বিষয়ে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইতোপূর্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এখনও যারা বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন তাদের জন্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

“অতীতে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভের পরও এবার নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পায়নি। তারা যেহেতু বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সেই বিবেচনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে অতীতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল তাদের যে দলের পদবী ছিল, সেই পদবীও কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ সুতরাং এখন ও ভবিষ্যতে যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিদ্রোহীরা কি দলে কোনো পদ পাবে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত অতীতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল তাদের দলের কোনো পদ দেওয়া হয়নি। তাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হয়েছিল, তাই তারা দল করতে পারছেন। কিন্তু দলের কোনো পদে তারা ফেরত যেতে পারেনি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই ধরনের ব্যবস্থা আলাপ-আলোচনা করে নেওয়া হবে।”