জামিনের পরেও নেতাকর্মীদের ধরে নেওয়া হচ্ছে: ফখরুল

উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার পরেও সাদা পোশাকে পুলিশ নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 11:36 AM
Updated : 19 Nov 2020, 11:36 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে অনলাইনে এক আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে তিনি এই অভিযোগ করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটু আগে আমি খবর পেলাম, আমাদের উত্তরার তুরাগ থানার সভাপতি-সম্পাদক তাদেরকে গতকাল হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পথে সাদা পোশাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে, এখনও ওদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এটা অহরহ ঘটছে এখন।

“আমি খুব স্পষ্ট করে সরকারকে বলতে চাই যে, অবিলম্বে এদেরকে ফিরিয়ে দেন তাদের পরিবারের কাছে, অবিলম্বে এদেরকে মুক্তি দিন। অন্যথায় জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে, সেই তরঙ্গ কিন্তু আপনাদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে বন্দি, আমাদের তরুণ সম্ভবনাময় নেতা তিনি নির্যাতিত হয়ে মিথ্যা মামলায় বিদেশে অবস্থান করছেন। আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ৩৫ লক্ষের উপরে, গুম হয়ে গেছেন আমাদের প্রায় ৫০০ এর উপরে নেতা-কর্মী এবং নিহত হয়েছেন সহাস্রাধিক এবং গত কয়েক দিন আবারও গুম হয়েছেন ৩-৪ জন।

“গতকাল বেলা ১টার দিকে হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর সাদা পোশাকে পুলিশ তুরাগ থানা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক মামুন পারভেজ তন্ময় ও সহসভাপতি তৌহিদুল ইসলাম হাসিবকে তুলে নিয়ে যায়। উত্তরার পশ্চিম থানা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মজুমদার মাসুমকে গত রাত সাড়ে ৭টায় উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টর থেকে ধরে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা, পল্টন থানা যুব দলের যুগ্ম সম্পাদক লিয়ন হককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এদের কাউকে এখনো খুঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “এখন দেশে প্রকৃতপক্ষে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। এই সময়ে সুশাসন দূরের কথা এখানে শাসন বলতে কিছু নেই।

“প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় তাদের (ক্ষমতাসীন) দুর্নীতির খবর আসছে। ভয়াবহ দুর্নীতি, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই, দুই-একটা চুনোপুটিদের ধরে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৬তম জন্মদিন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তারেক রহমান।

তারেক রহমানের জন্মদিনে দলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের নেতার জন্মদিনে কোনো উৎসব পালন করতে পারছি না। তার এই জন্মদিনে আমরা কেক কাটব না।

“আজকে আমরা তার জন্য দোয়া করব। আল্লাহ যেন তাকে দীর্ঘজীবন দান করুন এবং তাকে সেই শক্তি দিন যে শক্তি দিয়ে সে তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদে্শের জনগণকে মুক্ত করতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তির জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে এবং এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা (তারেক রহমান) ব্যক্তিগত জীবনে অনেক দুঃখকষ্টে আছেন। তার পিতাকে হারিয়েছেন তিনি খুব ছোট বয়সে, মা অন্তরীণ। তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো চলে গেছেন এই সরকারের নির্যাতনের কারণে। নিজে নির্বাসিত অবস্থায় বাস করছেন। সুতরাং তাকে (তারেক রহমান) সাহস দিতে হবে আমাদেরই।”

তিনি বলেন, “আমাদের এই নেতার উপরে শুধু বিএনপি নই, সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে রয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্ত হবে আরেকবার, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পাবে তাদের অধিকার, সেই আশা-ভরসা নিয়ে এদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। আমরা সবাই আজকে শপথ নেব- তার জন্মদিনে তার হাতকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশের জনগণকে একত্রিত করে, ঐক্যবদ্ধ করে আমরা এই ভয়াবহ যে দানব যে আমাদের সমস্ত অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তাকে আমরা পরাজিত করব।

“সেই লক্ষ্যে আমাদের এগোতে হবে, আমাদেরেকে অবশ্যই এই দেশকে জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। এই হোক আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় উপহার আমাদের নেতার জন্য।”

তৃনমূল পর্যায়ে বিএনপি ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের নানা কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।

ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ও এম সাব্বির আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, এনামুল হক চৌধুরী, বিশেষ সম্পাদক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, ছাত্র দলের নাজমুল হাসান, মিজানুর রহমান শরীফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।