হত্যার পর বঙ্গবন্ধুকে ‘ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল ওরা’

বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের পর খুনিরা নানা কৌশলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2020, 09:00 PM
Updated : 14 August 2020, 09:00 PM

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাতে ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশ, কিছু অজানা কথা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এ বিষয়ে কথা বলেন তারা।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শুরু হল ইতিহাস বিকৃতি। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পর থেকে এই বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর সব ইতিহাস নিষিদ্ধ হয়ে গেল। সেই পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষমতালোভী স্বাধীন বাংলায় সেনাশাসনকে বাঙালির বুকের উপর চাপিয়ে দিল।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিক তোফায়েল বলেন, “তিন বছর সাত মাসে দেশটাকে যখন স্বাভাবিক করলেন তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হল। এরপর আবার শুরু হল জেল জুলুম হত্যা।

“বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার যেন আর কেউ না থাকে সে কারণে নিষ্পাপ রাসেলকে হত্যা করেছিল এই খুনিরা। পরে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে গগণবিদারী স্লোগান দিয়ে বরণ করে নিয়ে এসেছিলাম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে আমরা ক্ষমতা তুলে দিতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারতাম না।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, “পঁচাত্তরের পরে খুনিরা মাঝে মাঝেই বন্দুক উঁচিয়ে তাদের বীরত্ব জাহির করত। তখন যারা ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন এবং আমরা যারা রাজনৈতিক কর্মী ছিলাম তারা ডাকসুর নেতাদের নেতৃত্বে ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে কলাবাগান থেকেই আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তখন ৩২ নম্বরে যাওয়াটা প্রায় অঘোষিত ‍নিষিদ্ধ ছিল।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিতে নানা কৌশল করেছিল তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানসহ অনেকে। তার আমলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। জারি করা হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।

“পঁচাত্তর পরবর্তী সময়টা নতুন প্রজন্মের কাছে বোঝাটা কষ্টকর। কারণ পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশ আর এখনকার শেখ হাসিনার বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে চিন্তা করা কঠিন বিষয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল, হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করল, বিচার কাজ বন্ধ করা হল। পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ করল তারা। ইতিহাস বিকৃত করে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার জন্য নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করা হল।

“জিয়াউর রহমানের আমলটা কেমন ছিল? স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করে বলল, বহুদলীয় গণতন্ত্র। টেলিভিশন থেকে শুরু করে সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হল।”

পঁচাত্তরের এই হত্যাকাণ্ড কারবালার ময়দানের হত্যাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে জুলিয়াস সিজার থেকে শুরু করে আমেরিকার আব্রাহাম লিংকন, ইন্ডিয়ার মাহাত্মা গান্ধীসহ যতগুলো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম, বর্বরতম হত্যাকাণ্ড এই ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ড।

“পৃথিবীর ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড কারবালাকেও হার মানিয়েছে। কারণ ওই সব হত্যাকাণ্ডে অবলা নারী, অবুঝ শিশু, আন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্য করা হয়নি।”

সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্তের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এই আলোচনায় যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।