বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছক হয়েছিল নয় বার: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নয় বার হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, যার কয়েকটির খবর বঙ্গবন্ধুও পেয়েছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2020, 12:01 PM
Updated : 13 August 2020, 12:37 PM

বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় এই তথ্য জানান আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম।

বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, “অনেকেই বলে সরকার পরিবর্তন করে নতুন সরকার গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। না, ক্ষমতার পালা বদলের জন্য নয়, দীর্ঘ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত পরিণতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য যেসব ষড়যন্ত্র হয়েছিল তা তুলে ধরেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “১৯৬৯ সালের ২০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জানতে পারেন যে তাকে হত্যা করার জন্য পাকিস্তান থেকে আততায়ী পাঠানো হয়েছে। পরে ২৩ শে ডিসেম্বর তিনি মার্কিন হাই কমিশনের দায়িত্বে থাকা সিনি সোবারকে জানালেন যে, ‘আমাকে হত্যা করার জন্য পাকিস্তান থেকে আততায়ী পাঠানো হয়েছে’। সিডনি সোবার ২৯ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনকে জানান, পূর্ব পাকিস্তানের এজন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তিনি নিশ্চিত তাকে হত্যা করার জন্য আততায়ী পাঠানো হয়েছে। 

“১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, সেটা মামলা না, এই মামলার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে।”

মন্ত্রী রেজাউল করিম বলন, “১৯৭০ সালে একাধিকবার নির্বাচনী ক্যাম্পিংয়ের মধ্যে তাকে বিনাশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৭২ সালে ১৩ জুলাই মেজর ফারুক মার্কিন হাই কমিশনে গিয়ে বলল ‘আমরা অস্ত্র কিনতে চাই। হাই কমিশন বলল অস্ত্র তো রাষ্ট্র কিনবে আপনি কেন কিনবেন?’ পরে মেজর ফারুক বলল ‘আমাদের অফিসে দরকার, আমরা অস্ত্র কিনতে চাই’। সফল হল না।

“১৯৭৩ সালের ১১ জুলাই কর্নেল রশিদ মার্কিন হাই কমিশনে গিয়ে বললেন, ‘ব্রিগেডিয়ার জিয়ার নেতৃত্বে বড় একটি টিম আছে সেই টিম আমাদের পাঠিয়েছে, আমরা অস্ত্র কিনতে চাই’। তখন মার্কিন ওই অফিসার ওয়াশিংটনকে জানালেন ‘বাংলাদেশের মিড লেভেলের একজন অফিসার আমাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে চায়’। এরপরে ১২ জুলাই কর্নেল রশিদ আবারও মার্কিন হাই কমিশনে গেলেন, ‘আমাদের অস্ত্র কিনতে সাহায্য করেন’। তখন তারা সফল হলেন, কি ব্যর্থ হলেন এটা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি।”

তিনি বলেন, “১৯৭৪ সালের ১৩ মে কর্নেল ফারুক আরও কিছু অফিসার নিয়ে গেলেন একটা ঊর্ধ্বতন ডিল হয়েছে, ‘আমরা মুজিব সরকারকে উৎখাত করতে চাই, আমরা আপনাদের সাহায্য চাই’। সেখানে কতটা সফল বা ব্যর্থ হয়েছেন সেই তথ্য মার্কিনিরা আজ পর্যন্ত প্রকাশ করেননি।

“১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ কর্নেল ফারুক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করলেন, বললেন ‘আমরা শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করতে চাই, আপনি নেতৃত্ব দেন। সেই বৈঠকে জিয়াউর রহমান কি বলেছেন সেটা আজ পর্যন্ত প্রকাশ হয়নি। পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পূর্বে কর্নেল ফারুক আবার জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করে বললেন ‘আমরা অপারেশেনে যেতে চাই আপনি কি বলেন, তখন জিয়াউর রহমান বললেন আমি সিনিয়র অফিসার আমাকে ইনভলব করো না’। তখনই জিয়াউর রহমান বললেন ‘গো এহেড’। এরপরেই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।”

জিয়ার দাম্ভিকতার কারণেই বিএনপির সাত আসন

১৯৭৯ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতীয় সংসদে ২০৭ জন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাম্ভিকতা দেখিয়েছিলেন বলেই ইতিহাসের আবর্তনে আজ বিএনপির আসন সাতটি বলে মন্তব্য করেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

“জিয়াউর রহমান নানা ধাপ পেরিয়ে ১৯৭৯ সালে ৯ এপ্রিল সংসদে রাষ্ট্রপতি হিসাবে আইন পাস করে বৈধতা দিয়ে বললেন বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের ধারাবাহিক কোনো ঘটনা বিচারের আওতায় আসবে না, এটাই আইন। এটা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করলেন।

“সেই পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগের এক অংশের নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেন গুপ্তসহ কয়েকজন বক্তব্য রেখে বলেছিলেন ‘আপনারা এমন জঘণ্য কাজ করবেন না’। তখন জিয়াউর রহমান বলেছিল ‘আমাদের মেজরিটি আছে, আমাদের ২০৭ জন এমপি। তখন মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন ‘মেজরিটির দাম্ভিকতা দেখান, এই পার্লামেন্টে আপনাদের এমন এক অবস্থা হবে, ২০৭ এর জায়গায় সাতজন লোক খুঁজে পাবেন না।”

রেজাউল করিম বলেন, “আজকে দেখেন ইতিহাসের পরিক্রমায় সংসদে তাদের সদস্য সংখ্যা সাতজন। এটাই হল দাম্ভিকতার পরিণাম।”

মন্ত্রী-এমপিদের অনেকে ঘরে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন বলে সরকারের এই মন্ত্রী।

“তিনি পাঁচটি ক্রাইসিসকে এক সঙ্গে মোকাবেলা করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বুলবুল, সুপার সাইক্লোন আম্পান, বৃষ্টি, বন্যা এবং কেভিড-১৯ এই পাঁচটা সমস্যাকে তিনি এক সঙ্গে ফেইস করছেন। কারণ, তিনি টার্গেট নিয়েছিলেন একজন লোকও যেন না খেয়ে মারা না যায়, একজন লোকও যেন বিবস্ত্র না থাকে। আম্পানের সারারাত তিনি সজাগ ছিলেন।

“২৪ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে, গবাদি পশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে কিনা সেই খোঁজ তিনি সারারাত ধরে নিয়েছেন, খেয়াল রেখেছেন। তিনি অবিরাম দেশের মানুষের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।”

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান কাজী হাসান আহমেদ, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল জাব্বার শিকদার, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ, প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক নাথুরাম সরকার, মেরিন ফিসারিজ একাডেমির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মাসুক হাসান আহমেদ।