জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে মিথ্যাচার: ফখরুল

দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারি পরিসংখ্যানকে ‘মিথ্যাচার’ বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2020, 07:21 PM
Updated : 12 August 2020, 07:21 PM

বুধবার রাতে সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় একথা বলেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “আজকে সকালে সরকারি পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম গ্রোথ রেইট সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য নাকি প্রচুর চলছে।

“এই যে সরকারের অবলীলায় মিথ্যাচার, এই যে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। এই বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য একটাই- জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করা।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সোমবার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, মহামারীর মধ্যেও গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। স্থিরমূল্যে এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। আর মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে ২০৬৪ ডলারে উঠেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে রোধ সরকার ‘ব্যর্থ’ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “করোনাভাইরাসের চিকিৎসা একমাত্র ঢাকার কয়েকটা হাসপাতাল ছাড়া সারা দেশে কোথাও নেই। আজকে আমার জেলার (ঠাকুরগাঁও) একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, গত ৪-৫ দিন ধরে অসুস্থ তিনি। তার এখন অক্সিজেন দরকার। ঠাকুরগাঁও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই, দিনাজপুরে তাকে পাঠানো হয়েছে সেখানেও কোনো ব্যবস্থা নেই। এখন তাকে আবার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আমি জানি না এই রোগী কীভাবে আসবেন?”

“এই সরকার সব দিক থেকে শুধু ব্যর্থই নয়, তারা দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছে। আজকে আপনারা দেখেছেন কক্সবাজারের ঘটনা। এরপরেও সরকার থাকে?”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “একটা অদ্ভুত রকমের শাসন চলছে, কোথাও কোনো ‍সুশাসন নেই, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত নয়। যে যেমন করে পারে শুধু লুট করছে ক্ষমতাসীনরা এবং মানুষের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ তারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

“প্রত্যেকটা প্রজেক্টে কীভাবে লুট করা হচ্ছে গাড়ি কেনার নামে, বিভিন্ন উপাদান কেনার নামে। অর্থাৎ আগেকার দিনে মগরা যেভাবে আসত, বর্গীরা যেভাবে আসত বাংলাদেশে অতি অল্প সময়ে লুট করে চলে যাও। এরা (ক্ষমতাসীনরা) একইভাবে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে শ্রীকৃষ্ণের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার’ সংগ্রামে এক হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।

জন্মাষ্টমীর এই দিনে হিন্দু সম্প্রদায়কে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “শ্রীকৃষ্ণের মূল যে কথা, মূল যে বক্তব্য হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবতা, শান্তি ও মানুষের ধর্ম। এটা হচ্ছে তার মূল বক্তব্য। শান্তি, সেই মানবতা কখনোই আসবে না যদি গণতন্ত্র না থাকে। আর গণতন্ত্র না থাকলে কোনো ধর্মাবলম্বী নিরাপদ নয়, তার স্বাধীনতা, তার অধিকার নিশ্চিত হতে পারে না। আজকে এই কারণে আমরা জন্মাষ্টমীকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনকে কেন স্মরণ করি? এজন্য স্মরণ করি যে, অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন মানুষের ওপরে সমগ্র জাতির উপরে যে অন্যায় সেটাকে দূর করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল।”

হিন্দু সম্প্রদায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘বেশি নির্যাতিত হয়েছে’ বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও অমলেন্দু দাশ অপুর পরিচালনায় এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুন্ড, অর্পনা রায়, সুশীল বড়ুয়া, মিথুন ভদ্র, আনু মিজি, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।