মূলধারার গণমাধ্যমের কারণে হালে পানি পায়নি গুজব: তথ্যমন্ত্রী

করোনাভাইরাস মহামারীকালে প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোর যথাযথ ভূমিকার কারণে গুজব ও অপতথ্য ছড়ানোর চেষ্টা সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2020, 07:13 PM
Updated : 14 July 2020, 07:13 PM

মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের আয়োজনে নিয়মিত ওয়েবনিয়ার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’র একাদশ পর্ব ‘করোনাসংকট মোকাবেলায় সঠিক তথ্যপ্রবাহ’-এ যুক্ত হয়ে তিনি একথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের প্রচেষ্টা ছিল, যখন দেশে সব কিছু বন্ধ হয়ে গেল তখন সংবাদপত্র চালু রাখা কঠিন ছিল। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা, করোনাভাইরাসের মধ্যে মানুষ কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

“দু-একটি বাদে সব মূলধারার মিডিয়া গুজবের বিরুদ্ধে জোরাল ভূমিকা রাখছে। যে কারণে যারা গুজব রটানোর চেষ্টা করেছিল, তারা হালে পানি পায়নি।”

বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর বিরুদ্ধেই ‘গুজব ও অপতথ্য ছড়ানোর’ অভিযোগ আনেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো এবং যারা রাজনৈতিকভাবে গত সাড়ে ১১ বছরে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা কিন্তু বিভিন্ন ধরনের গুজবের আশ্রয় নেয়। তারা নানা ধরনের মিথ্যা সংবাদ, ভুল সংবাদ পরিবেশন করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়।

“মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তারা আশ্রয় হিসেবে নিয়েছে। গুজব তৈরি করে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করা এমনকি সহিংসা তৈরি করার জন্য নানা সময় তারা অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই ভাইরাসের সময়ে অপচেষ্টা বন্ধ নেই। সেই অপচেষ্টা করে আসছে… ভিন্ন নামে করছে।”

করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় ‘ব্যর্থতা ঢাকতে’ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ঢাল হিসেবে নিয়ে ‘হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করছে বিরোধী দলগুলো, তাদের এই বক্তব্যের জবাবও দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।

“আমরা একটা বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করি। এখানে মুক্তমত, মুক্তচিন্তা, এগুলো থাকবে। আমাদের সরকার, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি লালন করে। আমরা মনে করি, সমালোচনা থাকলে কাজ করার ক্ষেত্রে সেটি সহায়ক। যদি সেটি অন্ধ সমালোচনা ও একপেশে সমালোচনা না হয়। সেজন্য আমরা অবাধ তথ্যপ্রবাহে বিশ্বাস করি।”

আলোচনায় যুক্ত হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, অপতথ্য, গুজব প্রতিরোধে এবার আইসিটি বিভাগ থেকে ‘ফ্যাক্টচেক ডট জিওভি ডট বিডি’ টুল চালু করা হবে।

“এই নামে একটা টুল আমরা তৈরি করছি। তৈরি শেষের দিকে। কোনো তথ্য, কোনো খবর অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন কেউ জানবেন, তার ফ্যাক্ট চেক করার জন্য এই টুল ব্যবহার করতে পারবেন।”

সরকারি তথ্য-সেবা এবং সামাজিক সমস্যার প্রতিকারে সহায়তায় দুই বছর আগে চালু হওয়া হেল্পলাইন ‘৩৩৩’ ও জরুরি সেবার হেল্পলাইন ‘৯৯৯’ পরিসেবায় সাফল্যের দাবি করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এবার গুজব প্রতিরোধে সাইবার সিকিউরিটি হেল্প ডেস্ক পরিসেবা চালু করা হবে।”

তিনি বলেন, “মিথ্যা অপপ্রচার ঘটানোর জন্য কয়েক ধরনের গোষ্ঠী কাজ করে। একটা হল যে রাজনৈতিকভাবে একটা পক্ষ… নির্দিষ্টভাবে শত্রুতামূলকভাবে কাজ করে, অপরদিকে বিভিন্নভাবে অবৈধভাবে পয়সা রোজগারের করার জন্য মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে।

“একটা গোষ্ঠী সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য অপচেষ্টা করে, করতেই থাকবে। কিন্তু আমাদের দিক থেকে আমরা  প্রস্তুতি রাখছি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “যেখানে তথ্যের ঘাটতি থাকে, সেখানে গুজবের সুযোগ থাকে। সেখানে অপতথ্য যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।

“আমরা পোস্ট ট্রুথের যুগে আছি, আমরা অল্টারনেটিভ ফ্যাক্টসের যুগে আছি। আমরা ফেইক নিউজের কথা বলি। এগুলো কিন্তু সীমাবদ্ধতা সামনে নিয়ে এসেছে। তাই সাংবাদিকদের সতর্ক থাকতে হবে, কোনটা ইনফরমেশন, কোনটা মিস ইনফরমেশন, কোনটা ডিজইনফরমেশন।”

‘করোনা সংকট মোকাবেলায় সঠিক তথ্যপ্রবাহ’- পর্বটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ।

আলোচনায় আরও যুক্ত হন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত, একাত্তর টিভির কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর মিথিলা ফারজানা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

করোনাভাইরাস সংকটে গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত, করোনাভাইরাস বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রচার ও সরবরাহ, দুর্যোগ মোকাবেলায় সঠিক তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় এ পর্বে।