দল নিবন্ধন আইনের খসড়া নিয়ে ‘মতামত দেবে না’ বিএনপি

শর্তের কড়াকড়ি বাড়িয়ে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন’ নামে বাংলায় নতুন আইন করার যে উদ্যোগ নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তা ‘যুক্তিসঙ্গত নয়’ বলে মনে করছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2020, 12:55 PM
Updated : 2 July 2020, 03:26 PM

প্রস্তাবিত ওই আইনের খসড়া প্রকাশ করে অংশীজনদের মতামত চেয়েছিল ইসি। তবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ভার্চুয়াল বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো মতামত না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল আমাদের বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে, মহামারীর এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা এ বিষয়ে কোনো মতামত দেব না। আমরা মনে করি, কমিশনের এই উদ্যোগ যুক্তিসঙ্গত নয় এবং অপ্রাসঙ্গিক।’’

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের অধীনে ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন চালু হয়। বর্তমানে ৪১টি দল নিবন্ধিত রয়েছে।

আরপিওর ৯০ (এ) থেকে ৯০ (ই) পর্যন্ত অনুচ্ছেদ নিয়ে এখন আলাদাভাবে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন’ নামে বাংলায় নতুন একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত ও বিধি-বিধানে কয়েকটি নতুন বিষয় যুক্ত করে কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে।

আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে মতামত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, নতুন দলের নিবন্ধন পেতে তিনটি শর্তের মধ্যে অন্তত দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে।

১. আবেদন করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসন পেতে হবে।

২. ওই সংসদ নির্বাচনে যে কোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে

৩.  যদি দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি থাকে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকে।

বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়।

১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে দলটির অন্তত একজন যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন

২. যে কোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী যদি অংশ নেওয়া আসনগুলোতে বাক্সে পড়া মোট ভোটের ৫ শতাংশ পায়।

৩.  যদি দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি থাকে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন থাকে।

বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০-এর খ-এর খ(২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং ২০২০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে। ২০০৮ সালে নিবন্ধন পাওয়া অধিকাংশ দল এখনও তা পূরণ করতে পারেনি।

নতুন আইনের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধি রাখার শর্ত পূরণে দলগুলোকেই তাদের গঠনতন্ত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আলোচনার জন্য শনিবার বিকালে ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। আড়াই ঘণ্টার ওই বৈঠকে মহামারী পরিস্থিতি ও দলের কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয় বলে একজন সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বৈঠকে অংশ নেন।