সরকার সব খুলে দেশকে বিপদে ফেলেছে: ফখরুল

করোনাভাইরাসের বিস্তারের ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে সব কিছু খুলে দিয়ে সরকার দেশকে চরম বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2020, 07:44 AM
Updated : 30 May 2020, 07:44 AM

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শনিবার সকালে তার কবরে ফুল দিয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দুই মাস সাধারণ ছুটি দেওয়ার পর রোববার থেকে অফিস, গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সংক্রমণ যখন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, তখন এসব খোলায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ঝুঁকি দেখলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অর্থনীতি সচল রাখতে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি অনসুরণ করে এসব খোলা হচ্ছে।

ফখরুল বলেন, “এই বিষয়গুলোতে সরকার প্রথম থেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মনে হয়েছে যে, সমন্বয় নেই কোথাও এবং তাদের (সরকার) সিদ্ধান্তগুলো সম্পূর্ণভাবে অপরিপক্কই নয়, অদূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবিহীন।

“কোনো রকম চিন্তা ছাড়া একেবারে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি যে, এটা একেবারে ভুল সিদ্ধান্ত এবং এটা চরম বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে দেশকে।”

এখন করোনাভাইরাসের বিস্তার আরও বেশি ঘটবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে ফখরুল বলেন,“বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের (সরকার) নির্বাচিত স্বাস্থ্যসম্মত টেকনিক্যাল কমিটি তারা পরামর্শ দিয়েছেন যে, এই মুহুর্তে একবারে একসাথে খোলা উচিত হবে না সব কিছু।

“সেক্ষেত্রে তারা তাদের কথা না শুনে সব কিছু খুলে দিয়েছে। আরও হুমকির মুখে গোটা জাতি পড়ে গেছে।”

বিএনপির তরফ থেকে জনগণের প্রতি পরামর্শ কী- প্রশ্ন করা হলে দলটির মহাসচিব বলেন, “আপনারা নিজেরা নিরাপদ থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন এবং ঘরে থাকুন।”

জিয়াকে স্মরণ করে ফখরুল বলেন, “আজকে করোনা সংকটময় মুহুর্তে এই নেতার কথা বার বার মনে হয়, এই ক্ষণজন্মা নেতা আজকে যদি নেতৃত্ব দিতে পারতেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের মানুষকে এত কষ্ট পেতে হত না।

“আজকে দেশে যখন গণতন্ত্র নেই, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, মানবিক অধিকার প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে লঙ্ঘিত হচ্ছে, তখন এই একদলীয় কান্ডজ্ঞান বিবর্জিত সরকার বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা জাতিকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।”

জিয়াকে স্মরণে কর্মসূচি

নয়া কেন্দ্রীয় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং কবরে ফুল দিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করছে বিএনপি।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়া।

বিএনপি দিনটিকে জিয়ার ‘শাহাদাৎ দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। এদিন প্রতিবছর এদিন নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সীমিত কর্মসূচিতে তা পালন করা হচ্ছে।

শনিবার সকাল ১১টায় বিএনিপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেরে বাংলা নগরে জিয়ার কবরে ফুল দেন।

কালো ব্যাজ ধারণ করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ফুল দেওয়ার পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন তারা। মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক।

ফুল দিয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা শপথ নিয়েছি এই দুর্দিনে আমরা জনগণের পাশে দাঁড়াব। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ইতোমধ্যে আমরা দাঁড়িয়েছি, আরও দাঁড়াবো এবং একই সঙ্গে গণতন্ত্র উদ্ধার করব, এইটাই হচ্ছে আজকের দিনের আমাদের শপথ।”

দিবসের শুরুতে সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

বিকাল সাড়ে ৩টায় রয়েছে বিএনপির আয়োজনে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা এবং মহানগর বিএনপির উদ্যোগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচি।

এছাড়া ১ জুন থেকে ১০ পর্যন্ত জিয়ার জীবন-কর্মের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যমে জিয়ার ছবি সম্বলিত পোস্টার প্রকাশ করেছে, কয়েকটি দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।