ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতা ‘কাজে লাগছে মহামারী মোকাবেলায়’

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের চেষ্টায় গড়ে তোলা বাংলাদেশের 'ডিজিটাল কাঠামো’ করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে’ বলে মত এসেছে এক আলোচনায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2020, 03:38 PM
Updated : 2 June 2020, 09:43 AM

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সেখানে বলেছেন, “সরকার তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সঠিক তথ্য সময়মত মানুষের কাছে পৌছে দিতে।”

আওয়ামী লীগের আয়োজনে মহামারী ও পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক ওই আলোচনা শুক্রবার রাতে ইন্টারনেটে সম্প্রচার করা হয়।

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, তথ্যের উৎস ঠিক না থাকলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও গুজব তৈরি করা সহজ হয়।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর তথ্য দিতে গত ২০ মার্চ করোনা ডট গভ ডট বিডি ওয়েবসাইটটি চালু হওয়ার পর ৬০ দিনে ৮৫ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে। ‘৩৩৩’ হটলাইনে এ পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্যের জন্য ৭৪ লাখ ফোন কল এসেছে।

প্রবাসবন্ধু কল সেন্টারের মাধ্যমে এক হাজার সাতশর বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি ৭৮ জনের বেশি ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ সেবা নিয়েছেন এবং এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ মানুষ ‘করোনা বিডি’ নামের মোবাইল অ্যাপটি ডাউনলোড করেছেন বলেও তথ্য দেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “গত ১১ বছরে এই ডিজিটাল কাঠামো তৈরি না হত, তাহলে এত দ্রুত মোবাইলে ফাইনানশিয়াল সেবাগুলো চালু করা সম্ভব হত না। নিত্যপণ্য, ওষুধ বা খাদ্য অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কেনা যেত না।”

পলক বলেন, “৭০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ- আমরা যতটা করি, ততটা বলতে পারি না। এবারও আমরা যতটুকু করছি কাজ, তার অনেকটাই আমরা এখনো সকলকে জানাতে পারিনি।”

তিনি বলেন, মহামারীর শুরু থেকেই সরকার রেডিও, টেলিভিশন এবং খবরের কাগজের মাধ্যমে বার্তা দিয়ে এসেছে। ডাক্তার, সেলিব্রিটি, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সেই কাজে যুক্ত করে প্রচার চালানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, মহামারীতে আইন প্রয়োগের বিষয়টি তাদের কাছে নতুন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে কাজে ‘সফল’ হয়েছেন তারা।

“হাসপাতালের দরজা থেকে শুরু করে কবরস্থান পর্যন্ত- এমনকি ত্রাণ বিতরণের মত কাজও পুলিশকে করতে হয়েছে। দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, ৭ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ প্রতিরোধ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর ডা. শাহনিলা ফেরদৌসি বলেন, হাসপাতাল ছাড়া বাহিরের কাউকে পিপিই পরার কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে- এমনটা তারা শোনেননি।

“তারপরও হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সার্ভিসগুলোতে পিপিই দেওয়া হচ্ছে। সচেতনতা তৈরিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্যগুলো পৌঁছে দিতে আমরা চেষ্টা করছি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, “আমরা আসলে স্বাধীনচেতা জাতি। ঘরে আটকে থেকে আমরা আমাদের ফ্রিডমটাকে মিস করি। ফ্রিডমের সঙ্গে আরেকটি বিষয় আছে, সেটা হলো দায়িত্ব গ্রহণ। ফ্রিডম এনজয় করলে দায়িত্ব নিতে হবে।”

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৩০ হাজারের কাছাকাছি, মৃত্যু হয়েছে ৩১৪ জনের।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-বাণিজ্যের সাময়িকী ফোর্বসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়।

সেখানে বলা, “শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৬ কোটি ১০ লাখের মত মানুষের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা-সঙ্কটের সঙ্গে অপরিচিত নয়। তবে তিনি এই সঙ্কট মোকাবেলায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, যাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম।

“এগুলো এমন উদ্যোগ যা যুক্তরাজ্য এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।”

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো ছিল দুর্বল, বিদ্যুতে ছিল বড় ঘাটতি।

আর এখন সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে, ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটির ওপরে।

অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ, বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রের গাউসুল আজম শাওন, অভিনেতা রিয়াজ আহমেদ আলোচনায় অংশ নেন।