দমননীতি দিয়ে খালেদার মুক্তির দাবি দমানো যাবে না: ফখরুল

সরকার ‘দমননীতি’ দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে ‘দমিয়ে রাখতে’ পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2020, 12:58 PM
Updated : 15 Feb 2020, 12:58 PM

তিনি বলেছেন বলেন, “সরকার মনে করেছে, এইভাবে নির্যাতন করে, নিপীড়ন করে, গ্রেপ্তার করে, গুম করে জনগণের যে প্রাণের দাবি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, গণতন্ত্রের মুক্তির দাবিকে তারা দাবিয়ে রাখবে, দমিয়ে রাখবে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে যে, এভাবে দমননীতি নিয়ে, নির্যাতন-নিপীড়ন করে জনগণের যে ন্যায্য দাবি, সেই দাবিকে কখনো দমন করা যায় না।”

শনিবার পুলিশের বাধায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করতে না পেরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিবের এই মন্তব্য আসে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত খারাপ’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা বার বার তার মুক্তির দাবি করেছি, জামিন চেয়েছি এবং মুক্তির মধ্য দিয়ে তার চিকিৎসার দাবি জানিয়েছি। আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো রকমের সাড়া পাইনি।

“আমরা আশা করব, অতি দ্রুত মানবিক কারণে দেশের জনগণের দাবিকে সন্মান করে তারা (সরকার) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেবেন।”

বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে নেতা-কর্মীদের সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা কোনো সুযোগ দিতে চাই না। দয়া করে এখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে যাবেন। পরবর্তী কর্মসূচি পরে ঘোষণা করব।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে তারা গুম করেছে, খুন করেছে, নির্যাতন করেছে। আমাদের প্রায় ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীকে আসামি করেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তাকে আজ ২ বছর ৭ দিন ধরে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৩টায় এই সমাবেশ শুরু হয়। দেড় ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতারা। রিকশার ওপরে দুটি মাইক লাগিয়ে সমাবেশের কাজ চলে।

বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় শনিবার বেলা ২টায় মিছিল হবে নয়া পল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে থেকে।

কিন্তু সকাল ৯টা থেকেই পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে ঘিরে রাখে। নয়া পল্টন থেকে বিজয়নগর, তোপখানা সড়কের অলি-গলিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। কর্মীদের কার্যালয়ে প্রবেশ করতেও বাধা দেওয়া হয় বলে নেতাদের অভিযোগ।

এরকম অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে বেলা আড়াইটায় হাবিব উন নবী খান সোহেল ও কাজী আবুল বাশার নেতা-কর্মীদের নিয়ে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ফুটপাতে সমবেত হন।

সোহেল বলেন, তারা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবেন। এ সময়ে কার্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা সরে পেছনে চলে যান।

পুলিশ সরে যাওয়ার পর রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে শুরু করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান ধরেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আজকে দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আজকে আমরা কর্মীদের যে সাহস দেখেছি এভাবে যদি আপনারা রাস্তায় থাকেন, ইনশাল্লাহ অচিরেই দেশনেত্রীকে আমরা মুক্ত করতে পারব।”

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি যে ভালোবাসা, এটাকে বুকে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের লাঠি-পেঠা করুক, প্রতিবাদ থামবে না। জেলখানায় ভরুক, প্রতিবাদ থামবে না। আমাদেরকে গুম করুক, প্রতিবাদ থামবে না। এই প্রতিবাদ চলতেই থাকবে।”

বিএনপির মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও মহানগরের কাজী আবুল বাশার ও আহসানউল্লাহ হাসানের পরিচালনায় এ সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মহানগরের বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেই্ন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল বক্তব্য দেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশে দলের কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন। তবে তিনি নিজে বক্তব্য দেননি।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সুপু, আমিনুল হক, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, শহীদুল ইসলাম বাবুল, খন্দকার মাশুকুর রহমান, হারুনুর রশীদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, খন্দকার আবু আশফাক, সাখাওয়াত হোসেন খান, মজিবুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।