ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষদিন বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এমন কথাই জানিয়েছেন তাবিথ।
মতবিনিময়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, “ইলেকশন ঘনিয়ে আসছে। সব প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা, সে ব্যাপারটি কিন্তু রয়ে গেছে। ইভিএম মেশিন কিভাবে কাজ করে, সেটা আমরা ইলেকশনের দিন বুঝব।
“কোনো অভিযোগ আসলে নির্বাচন কমিশন কি করে, সেটাও দেখার বিষয়। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন কতটা প্রস্তুত, সেদিকে জনগণ তাকিয়ে আছে। সেদিন কিন্তু তাদেরই বড় ভূমিকা রাখতে হবে।”
তবে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার কথা জানিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, “ইলেকশন শেষ হলে আমরা ফাইনাল মন্তব্য করব।”
নির্বাচনী প্রচারের বিভিন্ন সময়ে মাঠের প্রকৃত চিত্র গণমাধ্যমে উঠে আসায় ‘আরও দায়িত্বশীল’ হতে পেরেছেন বলেন মনে করেন তিনি।
“প্রচারে আমি আপনাদের দারুণ সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা জেনে গেছি, কোন জায়গায় জনগণের দাবি বেশি, কোন জায়গায় জনগণের ভোগান্তি বেশি। এতে আমি আরও দায়িত্বশীল উদ্যোগ নিতে পেরেছি।”
গণমাধ্যমকর্মীদের সঠিক দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, ভবিষ্যতেও সে ধরনের দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমি অনুরোধ করছি। সাধারণ মানুষদের কাছে মেয়রের জবাবদিহিতা নিশ্চিৎ করতে গণমাধ্যম ভূমিকা রাখবে, যেন মেয়ররা এক দুঃশাসনমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন।”
মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে তাবিথ নিজের স্বচ্ছতা ধরে রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন।
বিভাজনই এখন রাজনীতির সঙ্কট উল্লেখ করে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, “বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে সঙ্কট আছে, সঙ্কটটি হল আমরা ডিভাইডেড হয়ে গেছি। আমরা এতটাই ডিভাইডেড হয়ে গেছি যে, জনগণের জায়গা থেকেও ঐক্য ধরে রাখতে পারছি না। সে জায়গা থেকে বলছি, জনগণের জায়গাটাকে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল বলেন, “আমার বাবার সাথে সাংবাদিক অনেকের সুসম্পর্ক আছে। আমার সেই ছোটবেলা থেকে আপনারা আমাকে অনেক স্নেহ, মমতা দেখিয়েছেন। তবে বাবার সাথে যে ইনহ্যারিটেন্সটা ছিল, তা কিন্তু এখন আমার সাথেও আপনাদের হয়ে গেছে।”
এবার গাবতলীতে এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনী প্রচারে হামলায় গণমাধ্যমকর্মীদের আহত কথাও তুলে ধরেন।
“ইলেকশনের দিন আমাদের কাভারেজ করতে গিয়ে তারা যেন এভাবে আর আহত না হন, সেজন্য আমি আরও দায়িত্বশীল হব।”
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, “নির্বাচন নিয়ে সব শঙ্কা কেটে গেছে। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন বলে প্রত্যাশা করছি। প্রার্থীরাও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন বলে আশা করি।”
মতবিনিময়ে বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শ্যামল দত্ত, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতায় ঘাটতি রয়েছে
জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে তাবিথ আউয়াল মতবিনিময় করতে আসেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে।
সেখানে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে।”
“বিএনপির পক্ষ থেকে ১০৪টি অভিযোগ জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই সেগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কার জায়গাগুলো এখনো রয়েছে। আশা করি নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।”
তাবিথ আউয়াল বলেন, “বিএনপির অভিযোগ নির্বাচন কমিশন আমলে নেয়নি। নির্বাচনের দিন কোনো অনিয়মের অভিযোগ জানানো হলে সেগুলোর কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিয়েও শঙ্কিত। জনস্বার্থে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে এটি নির্বাচন পিছিয়ে ইসি প্রমাণ করেছে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করতে ইসি সচেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।”
নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী।
ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাবিথ বলেন, “ভোট না দিলেই অন্যরা সুযোগ পায়। ভোট দেওয়া মানে এক ধরনের চুরি ঠেকানো। আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব। কেন্দ্রে যাব, ভোট গণনা পর্যন্ত থাকব।“
অনুষ্ঠানে ডিআরইউ'র সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।