সোমবার সকালে গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন হলে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-২০৩০ এর আলোকে তৈরি ধানের শীষের প্রার্থীর ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে এই প্রতিশ্রতি তুলে ধরা হয়।
তাবিথ জানান, মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে তিনি ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম নেবেন। ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী এইডিস মশা ও লার্ভা নিধনে কার্যকর কীটনাশক প্রয়োগ, ‘মশা প্রতিরোধী’ বৃক্ষ রোপন, নিয়মিত মশার প্রবলতা পরীক্ষা ও জলাশয় পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেবেন তিনি।
মেয়র নির্বাচিত হলে রাসায়নিক কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করার প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ।
সম্প্রতি রাজধানীর চকবাজার, বনানী, কেরানীগঞ্জ ও গুলশানে অগ্নিকাণ্ডে সিটি করপোরেশনের দায়ও দেখেছেন অনেকে। রাসায়নিক গুদাম সরাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিরও অভিযোগ উঠেছে।
ইশতেহারে দূষণমুক্ত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, ঢাকার উত্তরে তিনি যথাযথ সবুজায়ন করবেন। ‘ভার্টিকেল গার্ডেন’ প্রকল্প চালুর পাশাপাশি নগরবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে তার। পরিবেশবান্ধব দালানগুলোকে সনদ দেওয়া হবে।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে নগরীর আবর্জনা অপসারণ, রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন ও পশু জবাইয়ের জন্য ‘আধুনিক স্লটার হাউজ’ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ‘টেকসই উন্নয়নের’ কথা রয়েছে তাবিথের ইশতেহারে। এ লক্ষ্যে গণপরিবহনমুখী যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে পুলিশ ও বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ঢাকার রুটগুলোকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ইলেকট্রিক ও হাইড্রোজেন চালিত বাস, রাত্রীকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ এবং নগর ঘিরে রাজউকের রিংরোড তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।
রাজধানীতে সড়কে বাস চাপায় মৃত্যুর ঘটনায় সড়কে নেমে শিক্ষার্থীদের যুগান্তকারী প্রতিবাদের পর নগরবিদরা বলছেন, সড়কে অব্যস্থপানার বেহাল দশা শিশুরা ‘চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরে ‘কমন ইউটিলিটি বাইপাস ও টানেল’ নির্মাণ, ‘স্কাইওয়ার্ক’ প্রবর্তন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ।
নগরে নিরাপদ ও সুপেয় পানির বন্দোবস্ত, প্রতিটি বাজারে ভেজাল খাবার পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, অপরাধ দমনে ইমারজেন্সি পোর্টাল স্থাপন ও ক্রাইম ম্যাপিং চালু করার কথাও বলেছেন তাবিথ।
নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা, শিশুপার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন এবং আবাসন খাতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে অনলাইন সার্ভিস চালু করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।
তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তাবিথ ঢাকা সিটিকে ‘ইন্টেলিজেন্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। ডেটা অ্যানালাইসিস ও ফেইস রিকগনিশন চালু করে অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চান তিনি।
“আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বিষয়ে আমি কখনো আপস করব না। আমি কথা দিচ্ছি, নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা আমি কখনো করব না। আমি কথা দিচ্ছি, পশ্চাদপদতা নয়, সবসময় আমার ভাবনা ও পরিকল্পনা থাকবে সম্মুখপ্রসারী ও আধুনিক।”
ইশতেহার ঘোষণার সময় তার সঙ্গে মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইবরাহীম, জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, জাতীয় পার্টি ( কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অতিথিদের আসনে বসেছিলেন।
ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামসহ মেয়র পদে ছয় প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে তারা ১ ফেব্রুয়ারি বেছে নেবেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য।