যেভাবে কাটছে ফজলে নূর তাপসের দিন-রাত

ভোটের বাকি আর মাত্র নয় দিন, এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার পাশাপাশি প্রচারের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় তুমুল ব্যস্ততার মধ্যে কাটাচ্ছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2020, 06:05 PM
Updated : 22 Jan 2020, 06:32 PM

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের দিন কীভাবে কাটছে, তার সাক্ষী হয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেন

মঙ্গলবার দিনের শুরুতে সকালে ঘুম থেকে উঠে ইশতেহার সম্পাদনা, পোলিং এজেন্ট তালিকা তৈরিসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মপরিকল্পনার দাপ্তরিক কাজ বাসায় বসেই সারেন ফজলে নূর তাপস।

এরপর স্ত্রীর প্রতিদিনের নির্বাচনী প্রচারণার খোঁজ-খবর নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন তিনি।

পরে বেলা ১২টায় বনানীর জে ব্লকের ১৮ নম্বর রোডের বাসা থেকে বের হয়ে সাড়ে ১২টার দিকে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে পৌঁছান তাপস।

সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। তার আগমনের খবরে এলাকায় ভিড় জমে যায়। নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষকে আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

‘ভালোবাসার’ প্রকাশ ঘটানোয় তাপসও পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানান।

ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই নবযাত্রা ও নবসূচনায় আমি বিশ্বাস করি, ঢাকাবাসী দলমত নির্বিশেষে সবাই উন্নত ঢাকা গড়ার জন্য আমার পক্ষে রায় দেবেন।”

রায়সাহেব বাজার থেকে ধোলাইখাল এলাকা হয়ে কলতাবাজার এলাকা ঘুরে সূত্রাপুরের লক্ষ্মীবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন তাপস।

ধোলাইখালের টংমার্কেটের বিপরীতে নাসিরউদ্দিন সরকার লেনের পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যরা আগে থেকেই ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফজলে নুর তাপস প্রচারণার ফাঁকে তাদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং পুরনো পঞ্চায়েত প্রথা আবার ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

এ সময় ফজলে নূর তাপস বলেন, “আমাকে মেয়র নির্বাচিত করুন, আপনাদের ঐতিহ্যের পঞ্চায়েত প্রথা আবার চালু করব। ছোটখাটো সমস্য আপনারাই সমাধান করবেন।”

বেলা ৩টার দিকে তাপস যখন সূত্রাপুর থানা এলাকায় আসেন, তখন ওই এলাকা জনসমুদ্র। নেতা-কর্মীদের ভিড়। তাপসকে দেখতে এলাকাবাসীর কৌতূহল আর সরু রাস্তা সব মিলিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়।

লক্ষ্মীবাজার, শাহী মসজিদ, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস হাই স্কুল, সেইন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল হয়ে মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ান শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে রাস্তায় নেমে আসেন তাকে একনজর দেখতে। অনেক বাড়ির ছাদ থেকে ফেলা হয় ফুল।

পরে লক্ষ্মীবাজার ডিআইটি মার্কেটের সামনে সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পে বক্তব্য রাখেন তাপস।

তিনি বলেন, “পুরান ঢাকার দিকে কেউ কখনও পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়নি। আমি পুরান ঢাকাকে নিয়ে পরিকল্পনা দিয়েছি। এখানকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত করে উন্নত ঢাকা গড়তে কাজ করব।”

এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. সাহিদ, সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদসহ বিপুলসখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

মিউনিসিপ্যাল মার্কেট থেকে পর্যায়ক্রমে সুভাষ বোস এভিনিউ, একরামপুর মোড়, ঋষিকেশ দাস লেনের ঐতিহাসিক সাউন্ড সিস্টেম প্রতিষ্ঠান ‘কল রেডী’র সামনে দিয়ে নির্বাচনী প্রচার করেন তাপস। বিরতিহীনভাবে শ্রী দাস লেন, কেএম দাস লেন, ফরাসগঞ্জ, লালকুটি, শ্যামবাজার, বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুরে গণসংযোগ করেন নৌকার এই প্রার্থী।

সন্ধ্যায় নবরাল লেন জামে মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে আবারও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন তিনি।

সন্ধ্যা ৬টায় ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী মালিক সমিতির দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন তাপস।

এ সময় ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “আমাকে নির্বাচিত করুন, আমি আপনাদের সেবক হিসেবে থাকব। আপনাদের জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দরজা সব সময় খোলা থাকবে। সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন।”

এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুরান ঢাকার শাখারিবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন নৌকার মেয়র প্রার্থী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সূত্রাপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন। পরে সাড়ে ৭টার দিকে গেন্ডারিয়ার সতিশ রোডে যান তিনি।

গেন্ডারিয়া এলাকায় মানুষের মাঝে লিফলেট বিতরণ করে রাত ১০টার দিকে আসেন গুলিস্তানের মহানগর নাট্য মঞ্চে। সেখানে ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন।

এই ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তাপস বলেন, “ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কোনো জটিলতা থাকবে না। পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্সের কাজ নিষ্পত্তি করা হবে।”

“এছাড়া সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে সমস্যা শুনে সমাধান করার জন্য উদ্যো নেব।”

রাত ১১টায় মতবিনিময় সভা শেষে গ্রিন রোডের রূপায়ন টাওয়ারে ব্যক্তিগত কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন তাপস। রাত সাড় ১১টায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে আসা কাউন্সিলর প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।

এরপর রাত ১২টার দিকে সেখানেই রাতের খাওয়া সারেন ফজলে নূর তাপস।

এরপর ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রচার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

দেখা যায় রাত ২টার সময় ওই কার্যালয়ে তার কক্ষের সামনে মানুষের ভিড়।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে রাত পৌনে ৩টার দিকে বনানীর বাসার দিকে রওনা হন ফজলে নূর তাপস।