বঙ্গবন্ধুর ফেরার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায় স্বাধীনতা: শামসুজ্জামান

যার ডাকে সুসজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল সাধারণ বাঙালি, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শত্রুদের হাতে কেমন আছেন, তিনি জীবিত নাকি মেরে ফেলা হয়েছে- এ ধরনের নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কেটেছিল নয় মাস।

নিজস্ব প্রতিবেদকমেহেরুন নাহার মেঘলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2020, 05:19 PM
Updated : 9 Jan 2020, 07:26 PM

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যখন সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বাংলার মাটিতে পা রেখেছিলেন, সেই ক্ষণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল বলে মনে করেন লেখক-অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের প্রাক্কালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ষাটের দশকের উত্তাল দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর কর্মকাণ্ড, ৭ ই মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর বন্দি দশা, স্বাধীনতার পর তার মুক্তি লাভ, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কেমন ছিলেন- এ রকম নানা বিষয়ে আলোকপাত করেছেন শামসুজ্জামান খান, যিনি বঙ্গবন্ধুর দুই বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচার সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন।

প্রকাশের অপেক্ষায় থাকায় বঙ্গবন্ধুর আরও দুটি বইয়ের সম্পাদনা পর্ষদেও আছেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ

এই লেখক-গবেষকের মতে, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে দেশপ্রেমে ভাস্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার লড়াইয়ের নেতৃত্বের প্রতিটি জায়গায় দিয়েছেন বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শিতার পরিচয়। এমনকি ’৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের হাতে তার গ্রেপ্তার হওয়াটাও ছিল বাঙালির মুক্তির সহায়ক। কারণ বন্দি বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ বাঙালির বড় অনুপ্রেরণা।

তার ভাষায়, “১০ ই জানুয়ারি, যেদিন তিনি ফিরে এলেন, সেদিনই মূলত পূর্ণতা লাভ করল আমাদের স্বাধীনতা।”

লেখক-গবেষক শামসুজ্জামান খানের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হল-

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটির তাৎপর্য আপনার কাছে কেমন? দিনটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছু বলেন।

শামসুজ্জামান খান:  ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিয়ে যাওয়ার পরের সময়টায় বঙ্গবন্ধু কোথায় কীভাবে আছেন, সেটা বাঙালি জানতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে যে তারা গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে সেটাও আমাদের জানানো হয়নি। নানা রকম কাহিনী গল্প আমরা শুনছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত হলাম তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে বাঙালি এমনিতেই যুদ্ধ করার জন্য রুখে দাঁড়াল। বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তিনি আমাদের নেতা এবং তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করে গেছেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আমাদের কাছে আরও বড় এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকলেন। এবং এটাকে ধরে রেখেই বাঙালি নয়মাস যুদ্ধ করে সফল হয়েছে।

৮ জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা করা হল। তাদের একটি প্লেনে রাওয়ালপিন্ডির বিমানবন্দর থেকে তাকে তুলে দেওয়া হয় লন্ডনের উদ্দেশ্যে। তারা প্লেনে তুলে দেওয়ার সাথে সাথে ব্রিটেনকে জানায়নি তাকে যে মুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাড়াহুড়া করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তখন লন্ডনে মিশনের দায়িত্বে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার রেজাউল করিম। তিনি দ্রুত গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান এয়ারপোর্টে। এরপর ভিআইপি লাউঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সাথে তার দেখা হয়। সেখানে ব্রিটেনের প্রতিনিধিও ছিলেন। তাকে বঙ্গবন্ধু বলেন একটি সাধারণ হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে। পরে সেই প্রতিনিধি বললেন, “কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে আমরা ক্লারিজ হোটেলে রাখি, ওখানে নিরাপত্তার বিষয়টি থাকে, এবং সেই কারণে আপনাকে সেখানে থাকতে হবে।” এরপর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের দূতাবাসের প্রতিনিধির সাথে একই গাড়িতে করে হোটেলে গেলেন। এরপর বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে আসলেন। এছাড়াও ছিলেন আরও অনেক উৎসাহী লোক। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে টেলিফোনে কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জেনে নেবেন। কেননা তিনি তখন দেশে না থাকার ফলে অনেক কিছুই জানতেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে হলে তাকে সেগুলো জানতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের সাথে যোগাযোগ করলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেই স্মৃতিটা কেমন?

শামসুজ্জামান খান: আমরা তো নয় মাস বেশ উদ্বিগ্ন ছিলাম। নানা রকম খবর শুনতাম তখন। কখনও শুনতাম তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু চারদিক থেকে বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আর বিশেষ করে কলকাতার আকাশবাণীতে সংবাদ প্রচার করা হত, সেগুলো বাঙালিকে উদ্দীপ্ত করেছে। একদিকে উদ্বেগ কাজ করছিল, অন্যদিকে উদ্দীপনা।

বঙ্গবন্ধু বলতেন, যে মানুষ মরতে প্রস্তুত, তাকে আর কি মারবে? আমাকে তোমরা কখনই মেরে শেষ করতে পারবে না। তবে তোমাদের কাছে একটাই অনুরোধ আমাকে মেরে ফেলার পর আমার লাশটা তোমরা আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও।

তবে আমরা আশার আলো দেখেছিলাম যখন গোটা বহির্বিশ্ব পাকিস্তানকে কঠোরভাবে সমালোচনা করছিল। এবং বিশ্বনেতারা পাকিস্তানি নেতাদের কাছে সংবাদ পাঠাচ্ছিল, কোনোক্রমেই শেখ মুজিবের ওপর কোনো নির্যাতন চালানো যাবে না। এক্ষেত্রে রাশিয়া ও শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অনেক ভূমিকা ছিল। তাদের ভূমিকা আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছিল।

আমি তখন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতাম, যার আগে নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ২৫ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর এর নাম হয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ১০ জানুয়ারি, যেদিন তিনি ফিরে এলেন, সেদিনই মূলত আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করল।

তিনি আসার সময় ভারতের দিল্লি হয়ে এসেছিলেন, সেখানে সকলের অনুরোধে তিনি বাংলায় ভাষণ দেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে বললেন, “আপনার দেশের যারা সৈন্য আমাদের যুদ্ধে ভীষণভাবে সাহায্য করেছে, তাদের অনেকেই ফেরত গিয়েছে। তবে বাকিদের আপনি ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।” এটিও একটি অসাধারণ ব্যাপার। ভারতীয় সৈন্যরা যদি আমাদের এখানে দীর্ঘদিন থেকে যেত, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নানা রকম বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হত। তারা বলতে পারত, তোমাদের দেশে এখনও বিদেশি সৈন্য রয়েছে, তোমরা পুরোপুরি স্বাধীন নও। ইন্দিরা গান্ধীও তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দিলেন, “আমি আপনার জন্মদিনে আমার দেশের সৈন্যদের সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনব। আপনার জন্মদিনে সেটিই হবে আমাদের উপহার।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির সময়টা আসলে কেমন ছিল? কিংবা তিনি যুদ্ধের সময়টা যদি দেশে থাকতেন, তাহলে কী হতে পারত বলে মনে করেন?

শামসুজ্জামান খান: বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠিত হল। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করেই, কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। তারা অসাধারণভাবে ওই সরকার পরিচালনা করেছেন। তাদের নেতৃত্ব ইতিহাসে চিরকালের মতো অক্ষয় হয়ে থাকবে। আবার অন্যদিকে মোশতাক ওই সরকারে থেকেও নানাভাবে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার একটা চেষ্টা করে গেছে। সেই জায়গায় তাজউদ্দীন-নজরুল ইসলাম যে অসাধারণ নেতৃত্ব দেখিয়েছিলেন, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ

বঙ্গবন্ধু যদি দেশে থাকতেন তাহলে পাকিস্তানিরা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বের করে ফেলত, হয়তবা মেরেও ফেলতে পারত। আবার এমন সম্ভাবনাও থাকতে পারত যে, তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যেতেন। কিন্তু সেটা আমাদের জন্য ভালো কোনো ফল বয়ে আনত না। আবার এমনটাও বলা হতে পারত যে, ভারতের আশ্রিত একটি সরকার গঠিত হয়েছে। সেটা আমাদের জন্য অসম্মানের হত। সেইজন্যই তিনি অনেক বিবেচনা করেই পাকিস্তানিদের কাছে ধরা দিয়েছিলেন।  এর ফলে তাকে আমরা যেভাবে পেতে চাই, তার চেয়েও আরও বড় বিষয় হয়ে উঠেছিলেন।
 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ফেরার পর দেশের জন্য নেওয়া বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগগুলো কেমন ছিল?

শামসুজ্জামান খান: দেশে আসার পর তার প্রথম কাজ ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আমাদের রাষ্ট্রের তিনটি মূলনীতি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র- এইগুলোর সাথে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের সংযুক্তি করলেন। তিনি বললেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ না থাকলে আমাদের এই সংগ্রাম ব্যর্থ হত। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগেও বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। হাজার বছরের ইতিহাসে  আর কোনো বাঙালি এমনটা বলেননি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য তিনি দেশের সবাইকে একসাথে পরিশ্রম করার জন্য নির্দেশ দিলেন। বললেন, সকলকেই একযোগে পরিশ্রম করতে হবে। তিনি সবাইকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ পুনর্গঠনের আহ্বান জানালেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে ও পরে তার সাথে আপনার যোগাযোগের অভিজ্ঞতা-স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান (ফাইল ছবি)

 

শামসুজ্জামান খান: বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধের আগেও রয়েছে, পরেও রয়েছে। ১৯৬৪ সালে যখন ঢাকায় দাঙ্গা হয়, আমি তখন জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপনা করতাম। তখন বঙ্গবন্ধু তোপখানার ওই মেডিকেল এসোসিয়েশন ভবনে একটি সাহায্য কেন্দ্র খুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু একটা জিপ নিয়ে আসতেন এবং আমাদের অর্থাৎ কর্মীদের নিয়ে পুরনো ঢাকায় যে হিন্দুরা বাস করতেন, তাদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে জগন্নাথ কলেজকে বেছে নিয়েছিলেন। তখন আমরা একসঙ্গেই কাজ করেছি।

বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সাথে আমি একই সাথে জগন্নাথ কলেজে পড়তাম। বঙ্গবন্ধুর সাথে সরাসরি যোগাযোগের ওইটাও একটা মাধ্যম ছিল।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭৫ সালের ১৭ই মার্চ তার জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। তখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন নীলিমা ইব্রাহীম।

এর আগে আমরা একটি সাহিত্য সম্মেলনের উদ্দেশ্যে মিটিং করেছিলাম। সেই সময় মাজহারুল ইসলাম সাহেব ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। তিনি নিয়ে গেলেন আমাদের। আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়ে প্রস্তাব করলাম, আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম একটি সাহিত্য সম্মেলন করব। বহু বিদেশি প্রতিনিধিকে আমরা আমন্ত্রণ জানাব এবং আপনাকে আমরা এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ করতে এসেছি।

তিনি বললেন, আমি তো বিখ্যাত সাহিত্যিক না, এই বিষয়ে আমি দক্ষও নই। যারা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অভিজ্ঞ তাদের বাদ দিয়ে আমার মতো রাজনীতিবিদকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করাটা ঠিক না। এরপর আমরা তাকে বোঝালাম, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোনো দেশ এভাবে স্বাধীন হয়নি। তাই এখানকার শিল্প-সাহিত্যের নীতি কী হবে, সেটাতো আপনি বলার পর তার ভিত্তিতেই আমাদের কাজ করতে হবে। এইভাবে বোঝানোর পর তিনি রাজি হলেন। কিন্তু শর্ত দিলেন, প্রথম কথা হলো আগের ঐতিহ্য আমি বজায় রাখব। মূল সভাপতি হবেন আমার বন্ধু পল্লীকবি জসীমউদ্দিন, আর আমার দুই পাশে থাকবেন একজন বন্ধু এবং একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। একপাশে থাকবেন আমার বন্ধু শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন এবং আরেক পাশে থাকবেন ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী।

তার এই ব্যাপারটি থেকে বোঝা যায়, সাহিত্যের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি, সেই সাথে সাথে বিজ্ঞান ও শিল্পকলার প্রতি তার অনুরাগ। সম্মেলনে তিনি এসেছিলেন।  এছাড়াও ছয়টি দেশ থেকে বিভিন্ন প্রতিনিধি দল এসেছিল সেই সম্মেলনে। ভারত থেকে এসেছিল ৭৫ জন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়। ছিলেন সুভাস মুখোপাধ্যায়, সুনীল গাঙ্গুলি, সুপ্তি চট্টোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: আপনি বঙ্গবন্ধুর উপর একাধিক বই লিখেছেন এবং তার বইয়ের সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন। এসব নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী? আর এই সব বইয়ে বঙ্গবন্ধুর কোন বিশেষ দিকগুলো উঠে এসেছে?

শামসুজ্জামান খান: বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা দুটি বইয়েরই সম্পাদনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমি যুক্ত ছিলাম এবং ভূমিকায় আমার কথা বিশেষভাবে বলা আছে। বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় বই ‘আমার দেখা নয়াচীন’- এর সম্পাদনাও আমরা করেছি। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ প্রকাশিত হবে। এরপর বঙ্গবন্ধুর চতুর্থ বই ‘স্মৃতিকথা’ সম্পাদনার কাজও আমরা করছি। আশা করছি, মুজিববর্ষের শেষদিকে সেই বইটি প্রকাশিত হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার বইগুলোতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তা, অর্থনৈতিক চিন্তা, তার জীবনদর্শন জানা-বোঝার চেষ্টা করেছি। তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কী করতে চাইছিলেন, কীভাবে করতে চাছিলেন সে বিষয়গুলো আছে। আমার ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ’ বইয়ে শেখ মুজিব কেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা ও বাঙালি জাতির জনক- এটা ব্যাখ্যা করা আছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকেই লেখাপড়া করে না, শুধু বলেই যায়। বিদেশে গিয়ে কিংবা দেশে কেউ জিজ্ঞাসা করে এটা ব্যাখ্যা করে বলেন, সেই ব্যাখ্যাটা এই বইয়ে আছে।