আমরা তো খোকা না, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ মেয়র হব: তোফায়েল

ক্ষমতাসীনরা তাবিথ আউয়ালের মনোনয়নপত্র ‘বাতিল ঘোষণার জন্য চেষ্টা করেছেন’ বলে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ নাকচ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2020, 12:06 PM
Updated : 9 Jan 2020, 12:08 PM

এই অভিযোগ করে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বলে উল্টো অভিযোগ করেছেন তিনি।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন পর্যন্ত সরকার নানাভাবে তাকে ঋণখেলাপি বা অযোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

এই সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে আছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে দলের এক সভায় তাবিথ আউয়ালের অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “নির্বাচন বিতর্কিত করার জন্য বিএনপি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়া টকশো সবখানে বলছে, আমরা জোর করতাসি, সমস্ত চেষ্টা করেছি, আমরা নাকি তাবিথ আউয়ালের মনোনয়নপত্র বাতিল করাব।

“কেন করব? আমরা তো সাদেক হোসেন খোকা না। ২০০২ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় মেয়র হয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগকে দাঁড়াতেই দেন নাই।”

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০২ সালে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সদ্যপ্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো মেয়র প্রার্থী ছিল না, খোকার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী।

বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের অভিযোগেরও জবাব দেন তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেন, “মওদুদ আহমদ কাজ করতে পারে, ঘরে ঘরে যাইতে পারে, বক্তৃতা দিতে পারে, কিন্তু আমরা পারি না। কী নির্বাচন কমিশন! আবার মওদুদ আহমেদ বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই!

“উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অথচ এমপি হিসেবে আমরা কাজ করতে পারি না, এটা হয় না, এটা হতে পারে না।”

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তোফায়েল।

ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনে দল মনোনীতদের বাইরেও অনেকে এবার কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন।

তাদের সতর্ক করে দিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “একটাই কথা, আমরা যাকে মনোনয়ন দিয়েছি তার হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা মনোনয়ন পরিবর্তন করব না। যারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন নাই, তারা প্রত্যাহার করেন।”

সভায় বক্তব্যে বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে যে দলের জন্ম সে দল কখনও গণতান্ত্রিক হতে পারে না।”

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেনের উদ্দেশে শেখ সেলিম বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কোনো স্টেটমেন্ট দেননি। একাত্তর ও পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি এক, আপনি তাদের সাথে হাত মেলালেন। ইয়াজউদ্দিন ও ফখরুদ্দিনের পা চেটেছিলেন আপনি। আপনার মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “আজকে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনার উপর ভরসা রাখেন না। যিনি দেশকে অন্ধকার থেকে টেনে তুলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এনে দিয়েছেন, তারা তার (শেখ হাসিনার) উপর ভরসা রাখতে পারেন না। কী করে রাখবেন? তাদের ভরসা তো সেই হাওয়া ভবনে।

“যে হাওয়া ভবন থেকে লুটপাট, টেন্ডারবাজি করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, যে হাওয়া ভবন থেকে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, ২১ অগাস্টে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল, সে হাওয়া ভবনের উপর তাদের বিশ্বাস।”

বিএনপি উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে ‘বিশ্বাস করে না’ বলে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ‘নানা ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করেন হানিফ।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলামকে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী অভিহিত করে তিনি বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো অভিযোগ নেই।  তাদের বিজয়ী হওয়া কোনো কঠিন ব্যাপার নয়।”

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ, ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি সভায় উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামও অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।