বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের এক কর্মী সভায় বক্তব্যে এই ঘোষণা দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ।
তিনি বলেন, “এই সিটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা নির্বাচনে জয়ের রায় হবে না, সমস্ত দেশের মানুষের এটা রায় হবে। পুরো বাংলাদেশের সব জেলার মানুষ ঢাকা শহরে বাস করে। ৩০ লক্ষ ভোটার অপেক্ষায় আছে ১৬ কোটি মানুষের পক্ষে আবার শক্তভাবে বিএনপির প্রতি একটা জনরায় দেওয়ার জন্য।”
“আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে। উনাদেরকে সহযোগিতা করে যেন ভোটের বাক্সে জনরায়টা নিয়ে আসতে পারি, রক্ষা করতে পারি, গণনা পর্যন্ত যেন আমরা লড়তে পারি।”
দ্বিতীয় দফায় মেয়র প্রার্থী করায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাবিথ আউয়াল বলেন, “আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, এই নির্বাচন একটা যুদ্ধ, এই যুদ্ধে আমরা এগিয়ে যাব। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাদের সামনে থেকে লড়াই করে যাব।
“এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর আন্দোলন ত্বরাণ্বিত করে ভোটের অধিকার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির পথে ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রস্তুত। আগামীকাল থেকে এই লড়াই আমরা শুরু করব। ইনশাল্লাহ, এই লড়াইতে আমরা অবশ্যই বিজয় ছিনিয়ে আনব।”
ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। ভোটের দিন দুপুরে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী প্রয়াত আনিসুল হক।
নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী।
তিনি বলেন, “অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য গণমাধ্যমকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হয়। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নাই, আশঙ্কাটা বেড়েই যাচ্ছে, সরকারের উপরে তো কোনো আস্থা নাই।
“গণমাধ্যমের প্রতি আমাদের অনেক আস্থা আছে, অনেক সম্মান আছে। আগামী দিনে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।”
সোনারগাঁও রোডে হক টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে এই কর্মী সভা হয়।
“কাউকে জোর করে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, কাউকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কাউকে বিভিন্নভাবে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কিন্তু আগামী নির্বাচন হবে কি হবে না- এখান থেকে জনগণ পরিমাপ করে।”
এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জালিয়াতি হয় কি না সেই আশঙ্কা প্রকাশ করে অবাধ-সুষ্ঠু ভোট আদায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান গয়েশ্বর।
তিনি বলেন, “আমরা ঘরে ঘরে যাব, মহল্লায় যাব, সবাইকে সাহস যোগাব, সবাই ভোট কেন্দ্রে আসবে তারা ভোট দিতে পারবে, তাদেরকে ভোট দিতে হবে।”
বিএনপি হারার আগে হেরে যায় বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গয়েশ্বর বলেন, “আপনার কথাটা তো অসত্য না। কারণ ৩০ তারিখের ভোট যদি আপনি ২৯ তারিখে ফলাফল দেন, তাহলে হারার আগে হারা ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নাই।
“আমরা হারার আগে হারি নাই, আমরা হারার আগে হারব না।”
নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র-জালিয়াতির আভাস পাওয়া গেলে এখান থেকেই সরকার পতনের আন্দোলনের সূচনা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
“কোনো দিক নির্দেশনার অপেক্ষায় আমরা থাকব না। আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কালক্ষেপণ না করে যেখানে যে রকম অবস্থায় আছে সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে পড়ব, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না,” বলেন তিনি।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসানের পরিচালনায় কর্মী সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, যুব দলের সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, উত্তরের সহ-সভাপতি বজলুল বাসিত আনজু, ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।