প্রার্থীদের হয়রানি করবে না পুলিশ, বিএনপিকে ইসির আশ্বাস

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত পুলিশ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের হয়রানি করবে না বলে নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2020, 04:55 PM
Updated : 16 Jan 2020, 07:32 AM

সোমবার বিকালে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের একথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ঢাকার উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণের প্রার্থী ইশরাক হোসেন; ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও।

বৈঠকে নির্বাচনের আগে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেপ্তার, একজনকে অপহরণ ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীর ঘরবাড়িতে ভাংচুর ও মারধরের অভিযোগ আনে বিএনপি। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি প্রার্থী ও কর্মীদের বাড়িতে অভিযানের নামে পুলিশ ‘হয়রানি করছে’ বলে অভিযোগ আনে দলটি।

আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, “ওনারা আমাদের পরিষ্কারভাবে কথা দিয়েছেন, সে অভিযান আর হবে না। নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান কোনো কিছু যদি না হয়, তাহলে ৩০ তারিখ পর্যন্ত গ্রেপ্তার বন্ধ থাকবে।”

পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, “বৈঠকে বিএনপি নেতারা পুলিশি হয়রানি, প্রার্থী সমর্থকদের উপর হানার অভিযোগ এনেছেন। আমাদের সঙ্গে পুলিশের বৈঠকে আমরা কঠোরভাবে বলে দেব, কোনো রকমের নিস্প্রয়োজনীয় হয়রানি যেন তারা প্রার্থীদের না করে ।”
“তবে এর মানে এই না যে, ক্রিমিনাল অফেন্স করে বসে কোথাও তাহলে নির্বাচনের দোহাই দিয়ে আইনি অ্যাকশন নেওয়া যাবে না। কোর্ট থেকে ডাইরেক্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যদি জারি হয়, তখন কোর্টের অর্ডারের বিরুদ্ধে পুলিশ অবস্থান নিতে পারে না।”

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ইসি অনড় থাকলেও তাতে অনাস্থা জানিয়ে চলেছে বিএনপি।

আমীর খসরু বলেন, “ইভিএম হচ্ছে সবচেয়ে নীরবে নিঃশব্দে চুরি করার একটা প্রক্রিয়া।

“ইভিএমের কথা আমরা স্ট্রংলি বলছি এ কারণে যে গত দুইটা নির্বাচনের একটিতে ২০১৪ সালে ভোটার ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল হয়েছে। ২০১৮ দখল হয়েছে মধ্যরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। এখন তৃতীয় অধ্যায়ে যে কাজটি চলছে, ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হওয়া।”

ইভিএমে বিরোধিতার কারণ তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, “ইভিএমের মাধ্যমে ভোট চুরির যে প্রক্রিয়া এটা একেবারে একটা নীরব, নির্দেশিত, নিঃশব্দ ও স্বয়ংক্রিয় ভোট চুরির একটা প্রকল্প ছাড়া কিছু না।

“কারণ প্রোগ্রামিংয়ের উপর নির্ভর করছে রেজাল্ট এবং এটা যে ভোট পেপারট্রেইল, যেটার মাধ্যমে আপনি ভেরিফাই করতে পারবেন, আপনারা জানেন পেপারট্রেইল না থাকার কারণে জামিলুর রেজা চৌধুরী একমত হন নাই, সই করেননি। তারপরে তারা ইভিএমে গেছেন। মেম্বারদের মধ্যে দ্বিমত ছিল। তারা ইভিএম করেছে উইদআউট পেপারট্রেইল। তার মানে ভেরিফিকেশনের কোনো সুযোগ নেই। “

বিএনপির নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, “ইভিএমে ভোট কারচুপি হওয়ার সুযোগ নাই, অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন ইভিএম থেকে সরে আসবে না। এটা সম্ভব না। এমন কোনো পরিকল্পনাও আমাদের নেই।  ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। “

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইভিএমের প্রোগ্রামিং অনলাইন নয়, অফলাইন সিস্টেম। তাই হ্যাকিংয়ের কোনো সুযোগ থাকবে না। ভোটের ব্যাপারে আর কোনো অসুবিধা হবে না।”

ইভিএমে ডেমো ভোটের আয়োজন

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ইলেকট্রোনিক ভোটিং মেশিন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও এ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইভিএম প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা যন্ত্রটির নানা খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।

এসময় বিভিন্ন ইলেকট্রোনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীরা ইভিএম যন্ত্রে ডেমো ভোটে আংশ নেন।

বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে ভোটার শনাক্তের পর কীভাবে ব্যালট ইউনিটে ভোট প্রদান করবেন তার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তারা।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল মো. কামাল উদ্দিন।

স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার নম্বর, বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের মাধ্যমে ভোটার শনাক্তের পর একজন ভোটার গোপন কক্ষে প্রবেশ করে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন বলে জানান ইভিএম পরিচালক।

যাচাই প্রক্রিয়া সুক্ষ্ম হওয়া এই পদ্ধতিতে একজনের ভোট অন্য কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনআইডি উইং এর সিনিয়র মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার ফারজানা আখতার, আইডিইএ প্রকল্পের আইটি ইনচার্জ মেজর মো: মাজহারুল ইসলাম ও আইটি সিস্টেম কনসালটেন্ট এ এইচ এম আবদুর রহিম খান।