গয়েশ্বর চান, সংসদ থেকে বেরিয়ে আসুক বিএনপি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন চাওয়ার পর বিএনপির সংসদে থাকাটা নিরর্থক বলে মনে করেন দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2019, 12:13 PM
Updated : 9 Dec 2019, 12:13 PM

সোমবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, বিএনপির সংসদ সদস্যদের উচিৎ হবে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সরকার পতনের আন্দোলনে শামিল হওয়া।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। সেই দাবি পূরণ না হওয়ার পাশাপাশি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয় বিএনপি।

ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করলেও হঠাৎ করেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন বিএনপি থেকে নির্বাচিতরা।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও শপথ নেওয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী হয়েছে বলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানালেও তিনি নিজে শপথ না নিয়ে সংসদ সদস্যপদ হারান।

এখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর কথা বিএনপি নেতারা বলার মধ্যে গয়েশ্বর দলের সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পক্ষে অবস্থান জানালেন।

তিনি বলেন, “২৯ তারিখের অবৈধ ফসলই আজকের পার্লামেন্ট। রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে যদি আমরা পার্লামেন্টে যোগ দিয়ে থাকি, তাহলে আজকে আমাদের দায়িত্ব, যারা আমাদের পক্ষ থেকে পার্লামেন্টে আছেন, গুটিকয়েক যে ক‘জনই হোক, তাদের সর্বপ্রথম পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে সরকার পতনের আন্দোলনে যুক্ত হওয়া।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর নিজের যুক্তি তিনি তুলে ধরেন এভাবে – “পার্লামেন্টেও থাকব, আবার সরকার পতনও চাইব, এই কৌশলটা কিন্তু জনগণ পছন্দ করবে না।

“অর্থাৎ আমরা যা চাই, সেটা মিন করতে হবে। আমাদের ডিটারমিনেশনটা জনগণের কাছে সুস্পষ্ট করতে হবে যে আসলে আমরা সরকারের পতন চাই। তখন জনগণ আপনার পাশে দাঁড়াবে।”

২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জনের পর সরকার পতনের ডাক দিয়ে ছিল বিএনপি, টানা তিন মাস অবরোধও ডেকেছিল, কিন্তু তাদের সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। এখনও বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

গয়েশ্বর বলেন, “যতক্ষণ আমাদের রাজনীতি ও আমাদের লক্ষ্য এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথ পরিষ্কারভাবে জনগণের কাছে উপস্থাপন না করব আমি, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আন্দোলনই দানা বেঁধে উঠবে না।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’র উদ্যোগে ‘আর কতকাল বন্দি থাকবে খালেদা জিয়া, নির্দয়ভাবে কত মরবে রুবাইয়াত শারমিন রুম্পারা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন গয়েশ্বর।

‘পতন অনিবার্য’

পুলিশকন্যা রুম্পার মৃত্যু নিয়ে গয়েশ্বর বলেন, “আজকে রুম্পা নিহত; আত্মহত্যা না ছুড়ে ফেলা হয়েছে, তা অস্পষ্ট। কিন্তু রুম্পা মারা গেছে, এটা তো স্পষ্ট। তাহলে এভাবে রুম্পারা কতকাল মরবে? একজন পুলিশ কর্মকর্তা, তার জীবন আজকে বিপন্ন।”

ফোরামের সদস্য সচিব গয়েশ্বরের পুত্রবধূ বিএনপি নেতা নিপুণ রায় চৌধুরীর এই অনুষ্ঠানে থাকার কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

এনিয়ে গয়েশ্বর বলেন, “আজকে তার (নিপুণ) বিরুদ্ধে নির্যাতনের নীলনকশা আমরা লক্ষ্য করছি। যে কারণে আজকে তিনি এই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য হয়েছেন।

“একটি কথা সরকারকে বলব, এক নিপুণের মুখ বন্ধ করলেও সব নিপুণের মুখ থাকবে। এখন এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায়, এই সমাজ ব্যবস্থায় মাঝে নিপুণ কিন্তু এখন একটা না, প্রতি ঘরে ঘরে নিপুণরা জন্ম নিয়েছে, সময়মতো সকল নিপুণ একসঙ্গে থাকবে।”

‘ঘরে ঘরে আজ পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে’ দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “সেই পরিবর্তন আপনি (সরকার) কীভাবে আটকাবেন? আজকে প্রশ্ন বেগম খালেদা জিয়া কতকাল কারাবন্দি থাকবেন। না, দীর্ঘকাল নয়।

“আজকে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে, কখন কোন জায়গা থেকে কে ডাক দেবে, তার পরিচয় কেউ জানতে চাইবে না। কারণ পরিবর্তনের ডাক যিনি দেবেন, তিনি আগামী দিনে রাজপথের নেতা হবে। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও সরকারের পতন অনিবার্য।”

বিপিএলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সমালোচনা

বিজয়ের মাসে বিপিএলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর।

তিনি বলেন, “এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী দুজন ভারতীয় স্টার নিয়ে কালকে নামলেন এই বিজয়ের মাসে, খেলা উদ্বোধন করলেন। তারপরে তিনি কি দেখালেন জনগণকে? যা দেখালেন, তা সবাই আলাপ করলেন।

ফোরামের আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য বিলকিস ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তাহসিনা রুশদীর লুনা, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শাহ নেছারুল হক, এনডিপির আবু তাহের বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিত, রফিকুল ইসলাম, মাশুকুর রহমান মাশুক, লায়লা বেগম, রাশেদ বেগম মুক্তা, নজরুল ইসলাম তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।