শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনটির সপ্তম কংগ্রেসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে।
পরশ যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিদায় নেওয়া চেয়ারম্যান ওমর ফারুক তার ফুপা।
পরশের ভাই শেখ ফজলে নূর তাপস আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তাদের চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনিও যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ওমর ফারুকের দায়িত্ব পালনের মধ্যেই বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় যুবলীগকে।
গত সেপ্টেম্বরে এক সভায় যুবলীগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার উষ্মা প্রকাশের পর ঢাকায় ক্যাসিনো বন্ধে র্যাবের অভিযানে প্রকাশ পেতে থাকে তাতে জড়িত সংগঠনটির নেতাদের নাম, গ্রেপ্তারও হন কয়েকজন নেতা।
শুরুতে এতে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক; পরে নিশ্চুপ হয়ে যান তিনি। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে থাকা যুবলীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগ আসতে থাকে তার বিরুদ্ধেও।
এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ওমর ফারুককে, বহিষ্কার করা হয় ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ কয়েকজনকে।
এরপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্য সচিব করে যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে দেওয়া হয়।
তাদের ব্যবস্থাপনায়ই শনিবার কংগ্রেস হয় যুবলীগের, যা উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অধিবেশনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল সমাবেশে সারাদেশ থেকে আসা নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের যে কয়টি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশটি করল যুবলীগই।
পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি উদ্বোধন অনুষ্ঠানমঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও ছিলেন যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম, সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ, শেখ ফজলে শামস পরশ।
যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম মঞ্চের নিচে সামনের সারিতে বসেছিলেন।
ওমর ফারুক কংগ্রেসে আসেননি কেন- সে বিষয়ে যুবলীগের কোনো নেতা মুখ খুলতে চাননি।
২০১২ সালে যুবলীগের ষষ্ঠ কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওমর ফারুক। গত ২০ অক্টোবর তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পঁচাত্তর ট্রাজেডিতে বাবা-মাকে হারানো পরশ ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজের থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার পর দেশে ফিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও রাজনীতির মাঠে দেখা যেত না তাকে। এমনকি ছোটভাই তাপসের নির্বাচনী প্রচারেও তাকে খুব-একটা নামতে দেখা যায়নি।
তবে ভাবমূর্তি সঙ্কটে থাকা যুবলীগকে উদ্ধারে ফুপু শেখ হাসিনার নির্দেশে পরশ এবার রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।
সম্মেলন প্রস্তুতির জন্য যুবলীগের যে কমিটি হয়েছে, তাতে আকস্মিকভাবে পরশের যুক্ত হওয়া দেখে সবার আলোচনায় আসে তার নামটি।
সম্মেলন প্রস্তুতি দেখতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিলেন, তখন তার সঙ্গে পরশ ছিলেন। এরপর সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ-কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কার্যালয়ে তিনি গেলে কর্মীরা করতালি দিয়ে তাকে ‘পরবর্তী চেয়ারম্যান’ হিসেবে শুভেচ্ছা জানায়।