এলডিপি আমার নামে: অলি

নিজের নামে দলের নিবন্ধনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অলি আহমদ বলেছেন, তিনি ছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপ) কর্তৃত্ব নেওয়ার আইনগত অধিকার কারোর নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2019, 11:06 AM
Updated : 18 Nov 2019, 04:07 PM

গত মাসে নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়া দুই নেতা দলের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণার পর বিকালে এলডিপি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের একথা বলেন।

অলি বলেন, “এলডিপি আমার নামে, আমি দরখাস্ত করেছি। এক নম্বর রাজনৈতিক নিবন্ধিত দল। এই দলতো অন্য কেউ নেওয়ার কোনো আইনগত অধিকার নেই। এখন যদি নিজের বাবার নাম বাদ দিয়ে আমার নামে কেউ পরিচিত হন আমার তাতে কোনো আপত্তি নাই।

“আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, এই এলডিপির রেজিস্ট্রেশন আমার নামে, আমি দরখাস্ত কারী- এটাই মূল এলডিপি।”

সকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আবদুল করীম আব্বাসীকে সভাপতি এবং সাহাদাত হোসেন সেলিমকে সদস্য সচিব করে সমন্বয় কমিটি নামে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করে এলডিপির একাংশ।

বিকালে সেখানেই ‘পেয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির’ জাতীয় মুক্তিফ্রন্টের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অলি আহমেদ।

আবদুল করীম আব্বাসীর নেতৃত্বে এলডিপির কমিটি ঘোষণাকারীদের বহিষ্কার করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওরা রিজাইন করেছে কয়েকজন। .. দুই একজন আছে যারা এরকম জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নয় তাদেরকে আমরা বহিষ্কার করে কাগজ নষ্ট করব?”

পাল্টা কমিটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অলি বলেন, “আমি এই দলের সভাপতি, ১২ বছর আগে দল প্রতিষ্ঠা করেছি। তারা (আবদুল করীম আব্বাসী ও সাহাদাত হোসেন সেলিম) ছিল আমার দলের সদস্য, সন্তানতুল্য ভাইয়ের মতো। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলাটা অশোভন, আমার মা-বাবা ওইরকম শিক্ষা আমাকে দেয়নি।

“সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো বক্তব্য নেই। বাংলাদেশ কয়েকশ রাজনৈতিক দল আছে, আরেকটা হবে। প্রেস ক্লাবের সুবিধা হবে, মিটিং হবে। সামনে ফুটপাতে বসবে, অনেক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে, অসুবিধা কিসের?”

জামায়াতে ইসলামীনির্ভর হয়ে পড়ার ও নতুন কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অলি বলেন, “কোনো ত্যাগী নেতাকে বঞ্চিত করা হয়নি। সে (সাহাদাত হোসেন সেলিম) সব সময় নিজেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব লেখত। অথচ আমাদের গঠনতন্ত্রে কোনো সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদ নেই, কোনো সিনিয়র সহসভাপতি পদ নেই।

“যে লোক মিথ্যা কথা বলে নিজের পরিচয় দিতে চায় এবং আমার নামে চলতে চায় তাহলে আপনারা এটা বুঝতে পারেন, নিজের বাপের নামের পরিচয় না দিয়ে আমি যে দল গঠন করেছি সেই দলের পরিচয় দিতে চায় তাহলে আপনারাই বুঝেন …।”

গত ৯ নভেম্বর এলডিপির যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা দলের ফোরামের আলাপ করেই করা হয়েছে বলে দাবি করেন এলডিপি প্রধান।

অলি তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, “বিগত ১০/১১ বছর যাবত এই সরকার ক্ষমতায়। জনজীবন দুর্বিষহ, মানবাধিকার বিঘ্নিত, গণতন্ত্র নাই, স্বাস্থ্য সেবা নাই, লেখাপড়া ঠিকভাবে চলছে না। ব্যাংকে টাকা নেই, লুটপাট, বিদেশে টাকা পাঁচার হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা এবং সর্বোপরি পেঁয়াজ নিয়ে যে কেলেংকারি পৃথিবীতে অতীতে এই ধরনের ঘটনা অতীতে কখনো ঘটে নাই।

“পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কারণে জনজীবন যে অতিষ্ঠ এই ব্যাপারে আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে বলতে চাই- এই সরকার জনগণের স্বার্থ রক্ষায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে, সুশাসনে, ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তারা জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার হলে জবাবদিহিতা থাকতো, পেঁয়াজের দাম, চালের দামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তো না।”

সংবাদ সম্মেলনে কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার সভাপতি সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সারোয়ার হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসেন কাশেমী, এলডিপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না অতিথি আসনে কিছুক্ষণ বসে অলির বক্তব্যের মধ্যেই চলে যান।