৭ নভেম্বর: দুই জাসদের কর্মসূচিতেই জিয়ার সমালোচনা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোচিত একটি দিন ৭ নভেম্বর ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করেছে জাসদের দুই অংশই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2019, 07:37 PM
Updated : 7 Nov 2019, 07:37 PM

বৃহস্পতিবার জাসদ ও বাংলাদেশ জাসদের আলাদা কর্মসূচিতে উভয় অংশের নেতারাই জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করেছেন।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জিয়া সিপাহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠে কর্নেল তাহেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন।

ক্ষমতা সংহত করতে জিয়া শুধু তাহেরকে হত্যা নয়, অনেক মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন, বলেছেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করলেও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা দিনটি পালন করে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে।  বিএনপি দিনটি পালন করে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে।

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতায় বসেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, তিনি সেনাপ্রধান করেন জিয়াকে।

তখন সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা চলছিল। ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারের জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াকে সরিয়ে নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন খালেদ মোশাররফ। এরপর ৭ নভেম্বর আবু তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে জিয়া মুক্ত হন এবং রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।

জিয়া পরে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন, অন্যদিকে সামরিক আদালতে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝোলান তাহেরকে।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর জাসদের আলোচনা সভায় ইনু বলেন, “সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থান ছিল বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, অবৈধ ক্ষমতা দখল, সংবিধান লংঘন, সামরিক শাসন জারি, সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতালিপ্সু অফিসার ব্যক্তিগত ক্ষমতা দখলের জন্য পাগলা কুকুরের মত কামড়াকামড়ি বন্ধ করতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা-সংকট দূর করতে।

“জিয়ার বিশ্বাসঘাতকতায় সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ইতিহাস ৭ নভেম্বরের ঘটনায় কর্নেল তাহের মহানায়ক আর জিয়া খলনায়ক হিসাবে পরিচিত করেছে।”

ইনু বলেন, “যারা ৭ নভেম্বরকে অফিসার হত্যা বা বিপ্লব ও সংহতি হিসাবে চি‎হ্নিত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে, তারা আসলে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী ও ক্ষমতালিপ্সু অফিসারদের কামড়াকামড়ির কুৎসিত ঘটনা আড়াল করতে চায়।”

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ইনু বলেন, “জাসদের সুশাসনের জন্য সংগ্রাম আর শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযান একে অপরের পরিপূরক। কর্নেল তাহেরের মত সাহস নিয়ে দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের আখড়ায় আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।”

জাসদ ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক নুরুল আখতারের সভাপতিত্বে দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, ফজলুর রহমান বাবুল, শফি উদ্দিন মোল্লা, শহীদুল ইসলাম রোকনুজ্জামান রোকন, নইমুল আহসান জুয়েল, ওবায়দুর রহমান চুন্নু সভায় বক্তব্য রাখেন।

ঢাকার শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি আম্বিয়া বলেন, “১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহের সৈনিক-জনতার ঐক্যের ভিত্তিতে এক দুঃসাহসিক অভ্যুত্থান করেছিলেন। জেনারেল জিয়ার ষড়যন্ত্রের ফলে এবং জাসদের কিছু ভুলত্রুটির কারণে এ বিপ্লব সফল হয়নি। জিয়া এই অভ্যুত্থান থেকে ফায়দা তুলতে জামাত-মুসলিম লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে।”

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আম্বিয়া বলেন, “দেশ এখন দুর্বৃত্ত ও লুণ্ঠনকারীদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা। শুদ্ধি অভিযানে সাফল্য নিয়ে সংশয় আছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সংস্কার না হলে রাজনৈতিক দুর্নীতি দূর না হলে ভবিষ্যত উজ্জ্বল বলা যাবে না।”

বাংলাদেশ জাসদ সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, “গণতন্ত্র চর্চার জন্য পরিবেশ উম্মুক্ত করতে হবে। এজন্য সরকারের কিছু করার আছে ।”

বাংলাদেশ জাসদের নিবন্ধন না দেওয়ায় ইসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “অনেক নিষ্ক্রিয় দল নিবন্ধিত, অথচ বাংলাদেশ জাসদের মতো সক্রিয় দলের নিবন্ধন হয়নি। নিবন্ধনের নামে এমন প্রতারণা ও তামাশা বন্ধ করতে হবে।”

সাংগঠনিক সম্পাদক হোসাইন আহমেদ তফছিরের পরিচালনায় এই সভায় জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন, মো. খালেদ, করিম সিকদার, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু বক্তব্য দেন।

বিচারের দাবি খালেদ মোশাররফ ট্রাস্টের

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা ও সৈনিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে খালেদ মোশাররফ ট্রাস্ট।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মাহজাবীন খালেদ এ দাবি জানান বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

খালেদ মোশাররফ বীরউত্তমের ছেলে মাহজাবীন খালেদ বলেন, “আপনারা জানেন, কোন পরিস্থিতিতে কারা, কার ইঙ্গিতে মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমকে হত্যা করে। খালেদ মোশাররফ কখনই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।  বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শায়েস্তা করে সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনাই ছিল তার লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা যিনি নিজে একজন বিচারবঞ্চিত ভুক্তভোগী, ২১টি বছর যাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বিচার শুরু করতে, ৩৪ বছর লেগেছে বিচারের রায় কার্যকর করতে। যিনি শত বাধা পেরিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। তিনি নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করবেন।”