‘অপকর্মকারীদের’ তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে: কাদের

সারাদেশে আওয়ামী লীগের ‘অনুপ্রবেশকারী ও অপকর্মকারীদের’ তালিকা দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2019, 08:30 AM
Updated : 3 Oct 2019, 08:30 AM

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই তালিকায় থাকা কেউ যাতে আওয়ামী লীগের কমিটিতে আর জায়গা না পায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের চারটি সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষকলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব সংগঠনের সম্মেলন আমাদের জাতীয় সম্মেলনের আগে নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। গত রাতে আমাদের অফিসের মাধ্যমে সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

এখন সারা দেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন হচ্ছে জানিয়ে কাদের বলেন, “এসব সম্মেলনে যাতে অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কিত ব্যক্তি, কোনো অপকর্মকারী কমিটিতে স্থান না পায় সে ব্যাপারে নেতৃবৃন্দকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।”

এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, “অনুপ্রবেশকারীদের একটা তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে, তৃণমূল পর্যন্ত।… সারা দেশে দলে অনুপ্রবেশকারী, অপকর্ম যারা করেছে তাদের একটা তালিকা তার কাছে আছে। বিভাগীয় দায়িত্বে যারা আছেন তাদের এই তালিকাটি দেখতে বলেছেন তিনি।

“তালিকা দেখে যার যার এলাকায় কমিটি গঠনে সতর্ক এবং সজাগ থাকার জন্য বলেছেন, যাতে এই ধরনের লোকেরা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান না পেতে পারে।”

চলমান ‘শুদ্ধি অভিযান’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা, তার প্রভাব দৃশ্যমান হবে কি না- এমন প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আর দৃশ্যমান কীভাবে হবে? আমাকে ধরে নিলে হবে? যারা ধরা পড়েছে তারা তো চুনোপুটি নয়, এত তাড়াতাড়ি রেজাল্ট চাইলে তো হবে না। এর মধ্যে আরও খবর আপনারা পাবেন, এর আওতায় অনেকেই আসবে।“

জয়নাল হাজারীর খবর ‘জানা নেই’

ফেনীর জয়নাল হাজারীকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে কিনা, তা দলের সাধারণ সম্পাদক কাদেরের কাছে জানতে চান একজন সাংবাদিক।

উত্তরে তিনি বলেন, “আমার এ ধরনের খবর জানা নেই। কোথা থেকে এল তাও জানি না। কে দিল এই খবর তাও জানি না। শুধু এইটুকু জানি, ফেনী জেলার সম্মেলন হবে। একটা তারিখ হয়েছে। জয়নাল হাজারী অসুস্থ, তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী কিছু সহযোগিতা করেছেন। তিনি সিঙ্গাপুর গেছেন কিনা তা কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি বললাম, আমার কাছে এসেছিলেন, বলেছিলেন তিনি অপারেশনের জন্য সিঙ্গাপুর যাবেন। এখানে উপদেষ্টা করার কোনো নির্দেশনা আমার জানা নেই।”

বহু ঘটনায় বিতর্কিত জয়নাল আবেদীন হাজারী ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনবার এমপি হয়েছিলেন তিনি।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে ব্যপক দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশ ছাড়েন তিনি। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ২০০৪ সালে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

দীর্ঘ আট বছর দেশের বাইরে থাকার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে হাজারীও দেশে ফেরেন। পরে তিনি সব মামলা থেকেও খালাস পেয়ে যান।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার জন্য ৪০ লাখ টাকা অনুদান দেন। ওই টাকা নিতে বুধবার গণভবনে যান হাজারী।

এরপর বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ নেতাদের বরাতে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে জয়নাল হাজারীর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার খবর আসে।

খালেদার বিষয়ে কোনো বার্তা নেই

দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়া জামিন পেলে যে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, সে বিষয়টি জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী কোনো ‘বার্তা দেননি’ বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “তারা (বিএনপি) যেটা চান, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশ আমি পাইনি।”

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন। ৭৪ বছর বয়সী খালেদাকে চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল থেকে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে।

সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত মিলে খালেদার বিরুদ্ধে এখন ১৭টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে দুটি মামলায় (জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) জামিন পেলেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন বলে তার আইনজীবীদের ভাষ্য।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে তার দলের নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে আসেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জামিন পেলে খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন।

খালেদার জামিনের বিষয়ে সরকার কোনো সহযোগিতা করবে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, “আমি তো চাই তারা আন্দোলন করুক। তাদের এক হাজার লোকের একটা ঝটিকা মিছিলও তো দেখলাম না। তাদের নেতানেত্রীরা বলছেন- জনগণকে সাথে নিয়ে মুক্ত করবেন, আমরাও বলছি আন্দোলন করুন। সভা সমাবেশের তো অনুমতি পাচ্ছেন।”

আদালত যদি জামিন দেয়, চিকিৎসকরা যদি খালেদাকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেন, তখনই সরকার বিষয়টি দেখবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।