‘চিকিৎসা ছাড়াই খালেদাকে কারাগারে নিতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

চিকিৎসা পুরোপুরিভাবে শেষ না করেই খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2019, 10:00 AM
Updated : 8 Sept 2019, 11:26 AM

নয়া পল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ঠিকভাবে না হওয়ায় তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “কেন্দ্রীয়ভাবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরে মানববন্ধন এবং ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এরপরে আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলো এই ধরনের মানববন্ধন ও সমাবেশের কর্মসূচি পরপর দিয়ে আসতে থাকবে।

“এর সঙ্গে আরও কর্মসূচি যুক্ত হবে। আমরা যে বিভাগীয় শহরে জনসভা করছিলাম - এটা কনটিনিউ করবে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে সমাবেশ হবে, ২৯ সেপ্টেম্বর হবে রাজশাহীতে এবং আমরা আশা করছি সিলেটে ২১ তারিখ সমাবেশের সম্ভাবনা আছে। রংপুরেও হবে তারপরে।”

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবাস করছেন। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত এপ্রিলে তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এখনও সেখানেই আছেন তিনি।

খালেদা জিয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তির আবেদন করবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্যারোল চাওয়ার অধিকার তো আমাদের নাই। প্যারোল চাইতে পারেন পেসেন্ট নিজে। উনি তো চাননি এখন পর্যন্ত । বলেছেন যে, ‘আমি প্যারোল চাচ্ছি না’। ভবিষ্যতে চাইবেন কিনা আমরা বলতে পারব না।”

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মহাসচিব বলেন, প্রতিদিনই তার স্বাস্থ্যের অবনতি  ঘটছে। আত্বীয়স্বজন যারা দেখা করতে যান, আমরা গিয়েছি, আমরা জানি, তাকে বিছানা থেকে ওঠাতেও দুজনকে সাহায্য করতে হয়, বিছানা থেকে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্যে তাকে হুইল চেয়ারে করে নিতে হয় সেখানেও আরও দুইজনকে হেলপ করতে হয়।

“এখননও তিনি পা বেন্ড করতে পারেন না, চেয়ারে বসলে পা সোজা করে রাখতে হয়। রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন না, তার দুই কাঁধ প্রায় ফ্রোজেন, হাতগুলো ফ্রোজেন হয়ে যাচ্ছে। অসুখটা এমন যেটা- ইরিভারসেভেল ডিজিস, যে ক্ষতিটা হবে তা আর কোনো চিকিৎসাতেই ফিরে আসবে না।

“যে কারণে আমরা বার বার বলছি, দেশনেত্রীর যে জামিন প্রাপ্য, সেটা তার পাওয়া উচিত। অনেকেই এই মামলাগুলোতে জামিনে মুক্ত আছেন। তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না উদ্দেশ্যমূলকভাবে। জামিনে মুক্তি পেলে তার সুবিধা মতো দেশে হোক, বিদেশে হোক হাসাতালে চিকিৎসা নিতে পারতেন।”

ফখরুল আরও বলেন, “বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এখন সুস্থ হয়ে গেছেন, তার রোগের উপশম হয়েছে এবং পরিচালক.. সম্ভবত তিনিও বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এখন সুস্থ।

“আমরা মনে করি, এটা ষড়যন্ত্রেরই একটা অংশ। তাকে আবার চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে। আমরা যেটা বলতে চাই, দেশনেত্রীর চিকিৎসা যদি প্রোপারলি না হয় তাহলে যেটা তার ঘটছে সেটা হচ্ছে- প্রতিদিন তার শরীর আরও খারাপ হচ্ছে, অবনতি হচ্ছে তার স্বাস্থ্যের । যেটাকে বলা হচ্ছে যে, প্রোগ্রেসিভলি খারাপের দিকে যাচ্ছে।”

বিএনপি মহাসচিব এসময় বিএসএমএমইউর মেডিকেল প্রতিবেদন পড়ে শুনান, যেখানে খালেদা জিয়ার জটিল রোগের সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার ন্যূনতম চিকিৎসার দিকে সরকার কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নজর দিচ্ছে অভিযোগ করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন,  “উনার (খালেদা জিয়া) এখন বয়স ৭৫ চলছে- এই অবস্থায় যেকোনো সময়ে উনার ব্লাড সুগার ১৪, উনারা (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) বলেন এটা নাকি নরমাল।

“আচ্ছা বলেন তো ফাস্টিং ব্লাড সুগার ১৪, এটা কী নরমাল হয়? যারা বলেন তারা কিন্তু ডাক্তার। অর্থাৎ ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, হাসপাতালের ডিরেক্টর সাহেব বলেন। উনারা কিন্তু মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। সরকারের শেখানো বুলি বলে যাচ্ছেন।”

জাহিদ হোসেন বলেন, “বাম হাত দেশনেত্রী কিছু ধরতেই পারেন না, বাম হাত সোজা করতে পারেন না। হাতটা উনি ছয় ইঞ্চি তুলতে পারেন না। সে জায়গায় উনারা বলেছেন যে, উনি ভালো, সুস্থ আছেন…যে মানুষটি দাঁড়াতে পারেন না, যে মানুষটি হাটতে পারেন না।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “এখানে তো আইনের চাইতে রাজনৈতিক বিষয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তো চেষ্টা করেছি এবং এখনও চেষ্টা করে ‍যাচ্ছি আন্তরিকভাবেই, যাতে করে আমরা তার জামিন পেতে পারি। কিন্তু পদে পদে বাঁধা, রাজনৈতিক প্রভাব। তার স্বাস্থ্যগত কারণে আমরা আবার চেষ্টা করব জামিনের জন্য।”

সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।