ছাত্রলীগকে আদর্শ নিয়ে চলতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া ভুলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2019, 04:53 PM
Updated : 31 August 2019, 05:14 PM

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকেলে গণভবনে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমিও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। সেখান থেকেই রাজনীতির হাতেখড়ি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এতটুকুই বলব, চাওয়া পাওয়া ভুলে গিয়ে ত্যাগের মহিমা নিয়ে আদর্শের সাথে ছাত্রলীগের নীতি আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলবে দেশের মানুষের জন্য।”

নীতি-আদর্শ না থাকলে কখনও নেতা হওয়া যায় না- কথাটি তরুণদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওভাবে নেতা হওয়া যায় সাময়িকভাবে। কিন্তু সেই নেতৃত্ব দেশ বা জাতিকে কিছু দিতে পারে না। সব কিছু ত্যাগ করে নীতি- আদর্শ নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারলে, মানুষের ভালোবাসা-আস্থা অর্জন করতে পারলে, এই ভালোবাসা আর আস্থা অর্জন করাই হচ্ছে একটা রাজনৈতিক নেতার জীবনে অমূল্য সম্পদ।

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

“মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র পথ, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্জন করেছিলেন।”

বাবার সেই আদর্শকে ধরেই স্বজনরা হারানোর বেদনা বুকে চেপে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা।

তিনি বলেন, “নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। একটাই চাওয়া- মানুষকে কী দিতে পারি, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারি।”

সেই অবস্থান থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: “আমি এইটুকুই বলব, যদি নিজেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের প্রকৃত সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তাহলে সত্যিকারভাবে তার আদর্শ ধারণ করে তার মতো ত্যাগী কর্মী হিসেবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।”

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

শোক দিবসের এই আলোচনায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের বর্বরতার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এই কথা মনে রাখতে হবে, তারা (খুনিরা) ছোট রাসেলকেও ছাড়েনি। তাদের মাথায় এটাই ছিল, ওই রক্তের উত্তরাধিকার একজনও যেন জীবিত না থাকতে পারে। আমি যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেই বাসায়ও তারা আক্রমণ করেছিল।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাত্র চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি।

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা, হাল ধরেন আওয়ামী লীগের। নির্বাসিত জীবনেও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।

আমৃত্যু আদর্শে অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত হিসেবে ১৫ অগাস্ট মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ‘জীবন দেওয়ার’ কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা জানান।

তিনি বলেন, “এই ৩২ নম্বর বাড়িতে যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হয় আমার মাকে খুনিরা বলেছিল, আপনি চলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি তো যাব না। উনাকে খুন করেছ। আমাকেও শেষ করে দাও।আমি এক পা ও নড়ব না।

“আমার মা কিন্তু ওদের কাছে জীবন ভিক্ষা চায়নি। আমার মা কিন্তু ওদের কাছে কোনো আকুতি মিনতি করেননি। বীরের মতো বুক পেতে দিয়েছিলেন বুলেটের সামনে। সেই কথা সকলকে মনে রাখতে হবে।”

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সবাইকে এইটুকুই বলব, এই আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। বাংলাদেশের জন্য জাতির পিতা জীবন দিয়ে গেছেন, কিছু নিয়ে যাননি। ৩২ নম্বর বাড়িতে লাশ পড়ে ছিল। কেউ তো কাফন দাফন করেনি। বনানী কবরস্থানে মাটি খুঁড়ে সেখানে লাশগুলো রেখে দেওয়া হয়েছিল। আমার বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল টুঙ্গীপাড়া।”

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধু যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন সেটা বিরল ইতিহাস মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু বিজয়কে নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্র চলছিল। ওই সময় আওয়ামী লীগের সাতজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়, পাটের গুদামে আগুন দেওয়া হয়েছিল।”

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

বক্তব্যে তার সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমার একটা জেদ ছিল, বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তোলা যেন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে, যে বাঙালি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করতে পারে সেই বাঙালি দেশকেও গড়তে জানে, গড়তে পারে।

“কিন্তু সেটা পারে কারা-যারা সংগ্রামের সাথে জড়িত, যারা আন্দোলনের সাথে জড়িত, যারা বিজয় অর্জনের সাথে জড়িত। সেই রাজনৈতিক দল যদি সরকারে আসে অর্থাৎ জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা যারা সংগ্রাম করেছি তারা যদি ক্ষমতায় আসি কেবল তারাই পারবে দেশ গড়তে।”

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

“অপরদিকে যারা স্বাধীনতাবিরোধী আল-বদর, রাজাকারদের পদলেহন করে, তোষামোদি করে, পরাজিত শক্তির পদলেহন করে তারা দেশকে উঠতে দেবে না।এজন্য যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে দেশের উন্নয়ন হয়েছে।”

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।