‘গুটিকয় লোককে সুবিধা দিতে’ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি: ফখরুল

উন্নয়নের নামে ক্ষমতাসীন দলের ‘গুটিকয়েক’ লোককে সুবিধা দিতে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2019, 05:24 PM
Updated : 9 July 2019, 05:24 PM

মঙ্গলবার বিকালে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন যে, এখন উন্নয়নের একটা ঢোল বাজানো হচ্ছে সব সময়ই। গতকালও (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে ফেরত এসে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেখানে তিনি বলেছেন যে, উন্নয়ন পেতে হলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ মূল্য দিতে হবে।

“অবশ্যই আমরা জানি, উন্নয়নের একটা মূল্য দিতে হয়। সেই মূল্য দিতে হয় কার জন্যে? সেই মূল্যটা দিতে হবে সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্যে। আমরা ভালোভাবে দেখছি আজকে যে উন্নয়নের কথা বলে যে টাকা জনগণের পকেট থেকে বের করে নেওয়া হচ্ছে, সেই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে শুধুমাত্র গুটিকতক এই ক্ষমতাসীন দলের সুবিধার জন্যেই।”

এলএনজি আমদানি নিয়ে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে কেন? এই গ্যাসের মূল্য এলএনজি আমদানি করে তার ভতুর্কি দেওয়ার জন্য।

“এই এলএনজি কারা আমদানি করছেন? আজকে এই সরকারের সঙ্গে যারা ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, যারা মন্ত্রী অথবা উপদেষ্টা অথবা তাদের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন তাদের জন্যই আজকে বাড়তি যে খরচ, বাড়তি যে ব্যয় জনগণকে করতে হচ্ছে।”

বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের জনগণের কাছে ‘দায়বদ্ধতা নেই’ অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বর্তমানে সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। এদের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

“তাই গ্যাসের দাম বাড়লেই বা কি বা ভ্যাটের পরিমাণ বা ইনকাম ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়লেই বা কি! এরা জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে।”

সরকার দেশে একদলীয় শাসন চালাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে ক্রমান্বয়ে অত্যন্ত সুচতুরভাবে পরিকল্পিতভাবে তারা সংবিধান পরিবর্তন করেছে। বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের পরে তারা এই কাজটি শুরু করেছে। আজকে এমন একটা জায়গায় সংবিধানকে নিয়ে এসছে যে, কাটাছেঁড়া করে সেখানে গণতন্ত্রের কথা মুখে বলা হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোথাও গণতন্ত্র নেই। রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে।

“পাবনাতে ১৯৯৪ সালে যে বিরোধী দলের নেত্রীর উপরে রেলে হামলা হয়েছিল, কোনো হতাহত হয়নি। আমরা সব সময় যে কোনো হামলা, যে কোনো সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু যেখানে কোনো হতাহতই হয়নি এবং তিন বছর পরে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আজকে ২৫ বছর পরে সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে নয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যেখানে কোনো মৃত্যুই হয়নি। ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড- এই হচ্ছে বিচার বিভাগের অবস্থা।”

খালেদা জিয়াকে ‘বেআইনিভাবে’ আটকে রাখা হয়েছে অভিযোগ তুলে ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলোর দিকে তাকালে আপনারা দেখতে পারবেন সেগুলো সম্পূর্ণভাবে সাজানো মামলা।

“কোথাও কোনো তছরুফ হয়নি, কোনো কোনো টাকা বাইরে চলে যায়নি, সেখানে আজকে অন্যায়ভাবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং সেটাকে বাড়িয়ে আবার ৫ বছর থেকে ৭-১০ বছর করা হয়েছে।এসব মামলায় তিনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাওয়ার যোগ্য, তিনি জামিন পাচ্ছেন না।

“তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এমনও মামলা আছে যে, একই সময়ে তিনটি থানায় গিয়ে বোমা মেরেছেন। এগুলো দিয়ে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয় যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় কারণ তারা জানে যে, তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক, তিনি যদি বেরিয়ে আসেন, জনগণকে নিয়ে চলতে থাকেন তাহলে কোনোভাবে তাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না এবং তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সেজন্য তাকে বেআইনিভাবে ১৬-১৭ মাস আটক করে রাখা হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে সরকার এই দেশকে একটা পরনির্ভরশীল দেশে পরিণত করতে যাচ্ছে। আপনারা শুনেছেন আজকে আমাদের দেশে শিক্ষিত যুবকেরা চাকুরি পায় না, কর্মসংস্থান নিচের দিকে নামছে। একদিকে উন্নয়নের কথা বলে, অন্যদিকে আমাদের ছেলেদের চাকুরি নেই।

“অথচ একই সময়ে আজকে ভারত থেকে কর্মীরা এসে, বিভিন্ন মানুষেরা এসে তারা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণকে ‘জাগিয়ে’ তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তাকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী মুক্ত হলেই শুধুমাত্র গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।

“তাই আমরা বলছি, এই সংসদ বাতিল করতে হবে এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। তাহলেই জনগণের সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।”

রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে দলীয়, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও একগুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের কেন্দ্রীয় সম্মেলন-২০১৯ কাউন্সিল উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। এর আগে দুপুরে ড্যাবের বার্ষিক সাধারণ সভা হয়।

ড্যাবের নতুন নির্বাচিত সভাপতি হারুন আল রশিদ, মহাসচিব আব্দুস সালাম, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সেলিম, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিল ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসানের নাম ঘোষণা করা হয়। গত ২৫ মে কাউন্সিলরদের ভোটে এই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে ড্যাবের যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তা বিলুপ্তি হল।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ড্যাবের কমিটি ভেঙে দিয়ে অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের সময়সীমা বেঁধে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ড্যাবের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ওবায়দুল কবির খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ড্যাবের অধ্যাপক রফিকুল কবির লাবু, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম স্বপন, একেএম মহিউদ্দিন ভুঁইয়া মাসুম, নবনির্বাচিত সভাপতি হারুন আল রশীদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সেলিম, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসান।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, অধ্যাপক গোলাম কাদের দুলাল, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অধ্যাপক আতিকুর রহমান, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমানসহ শতাধিক চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।