কামাল হোসেনের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সহযোগিতার লক্ষ্যে: সুলতান মনসুর

গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষে ভোট করে সংসদে যাওয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, নির্বাচনের আগে তিনি কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন যাতে ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সহযোগিতা করতে পারেন।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2019, 02:39 PM
Updated : 23 June 2019, 06:03 PM

তিনি নিজে আওয়ামী লীগ ছাড়েননি এবং আওয়ামী লীগও তাকে বহিষ্কার করেনি বলে সংসদে বলেছেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর।

রোববার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় তিনি বলেন, “আমি যখন একটি রাজনৈতিক কারাগারে ছিলাম তখন জাতীয় নেতা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনকে সামনে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম। আমার অনুভূতি থেকে মনে করেছিলাম, এমন একজন ব্যক্তির সাথে একাত্ম হয়ে রাজনীতি করি, যার মধ্য দিয়ে আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সহযোগিতা করা যায়। আমি কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়িনি। আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কারও করেনি।”

ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর এক সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে দলে অপাঙক্তেয় হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গণফোরাম গঠনকারী কামাল হোসেন কয়েক বছর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে একটি ফোরাম গড়ে তোলেন। এবার নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার সময় গণফোরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া দুটোই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।

গত ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে জয় পায় বিএনপি। আর গণফোরামের দুটি মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পায় মোট আটটি আসন।

নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলে তারা। নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। তাদের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই শপথ নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে প্রথম সংসদে যোগ দেন সুলতান মনসুর।

শপথের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আমি শপথ না নিলে বিরোধী দলে যে কয়েকজন আছেন তারাও শপথ নিতেন বলে আমার মনে হয় না। আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যাকে দেখে রাজনীতি শিখেছিলাম, যাকে লক্ষ করে রাজনীতি শিখেছিলাম তার আদর্শের প্রতি আস্থা রেখে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে শপথ নিয়েছিলাম।”

বাজেট আলোচনায় সুলতান মনসুর বলেন, “যারা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গাছের আগেরটা খেতেন তলেরটাও খেতেন তারা আজকে সংসদেও আছেন। স্বৈরচারবিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচারদের যারা সমর্থন করতেন তারাও আছেন, ওয়ান ইলেভেনে যারা সুবিধা নিয়েছে তারা আজকে সংসদে আছেন। এদের সবাইকে নিয়ে সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে না।

“সংসদ নেতাকে আহ্বান জানাব, ২০২০-২১ মুজিব বর্ষ পালনের লক্ষ্যে, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন। এরই মধ্য দিয়ে আপনাকে সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক সমাজ ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সঠিক এবং কঠিন পথে এগোতে হবে।”

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু কোনো দিন জনগণ ছাড়া, সংগঠন ছাড়া কোনো নীতি নির্ধারণী দিতে এগোতেন না। আজ ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সেই ২৩ জুনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে বলব, কুচক্রী মহল যারা তাকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে ঠেলে দিয়েছেন তাদের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগকে সুসংহত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের পাশাপশি জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্য যে সমস্ত মানুষ তাদের নিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”

আওয়ামী লীগের সাংসদদের সারির দিকে ইঙ্গিত করে সুলতান মনসুর বলেন, “আমার আজকে হয়ত ওই দিকেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৮ সাল থেকে... জানি না সেই অজানা ইতিহাস এখন বলার সুযোগ নেই। বলতে পারছি না। আজকের সংসদ নেত্রী আমাকে ছাত্রলীগের সভাপতি বানিয়েছিলেন। তিনি আমাকে ডাকসুর ভিপিও বানিয়েছিলেন।

“মাননীয় স্পিকার আপনি হয়ত বা আমাকে ভিপি পদে ভোটও দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতার পরে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ২০০৮ সাল থেকে আমিও সেই প্রক্রিয়ার ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার ওই প্রান্তে (সরকারি দলে) যে সমস্ত জাতীয় নেতৃবৃন্দ আছেন তারা অনেকেই জানেন। অনেকেই সেই সময়ে ছিলেন। যা-ই হোক আমি সেদিকে যাব না।”

তিনি বলেন, “বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে টাকা দেওয়া হয় কিন্তু সেগুলো যদি স্বচ্ছভাবে মানুষের কাছে না পৌঁছে তাহলে লক্ষ কোটি টাকার বাজেট করে মানুষের কী হবে, সেটা আমরা সকলেই বুঝতে পারি। স্বচ্ছভাবে টাকাগুলো যেন ব্যয় হয় সেটা দেখতে হবে।

“আমি সকল মন্ত্রণালয়ের কথা বলব না। একটি জায়গা থেকে শুরু করেন। যে কোনো একটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে শপথ নেই, ‘যে ঘুষ খাবে আর যে ঘুষ দেবে তার শাস্তি হবে।”

সুলতান মনসুর বলেন, “এক লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা ঋণ খেলাপ। ব্যাংকে টাকা পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সঠিক হতে হবে।”