জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রতিফলন এবারের নির্বাচনেও দেখা গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এসে আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়েছে, যা ছিল নজিরবিহীন।
জনগণের এই আস্থাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরও মজবুত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
এক দশকের বেশি সময় সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া শেখ হাসিনা বলেন, “ইতোমধ্যে এইটুকু বলতে পারি, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে সরকার ধীরে ধীরে মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যায় বা তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস আমরা অর্জন করেছি এবং জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “এবারের যেই নির্বাচন যেটা হয়ে গেল, যদি আপনারা নির্বাচনের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে, যেটা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। এইবার একটি দলকে এভাবে সকল শ্রেণি এসে সমর্থন জানায়, এমনকি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের সমর্থন করেছে।
“তাছাড়া কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে পেশাজীবী মানুষ। সব থেকে বড় কথা যারা প্রথমবারের ভোটার সেই নবীন ভোটার এবং আমাদের বোনেরা, নারীরা- সকলেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারকে আবার তারা চেয়েছে তাদের সেবা করার জন্য। সেইভাবে তারা ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছে।”
গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৮৮ আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। পক্ষান্তরে নির্বাচনে তাদের প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীরা পেয়েছে মাত্র আটটি আসন।
নির্বাচনে বিএনপি জোটের এই ভরাডুবির কারণ সম্পর্কেও নিজের মত তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“আর একটা কারণ আমি বলব, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যে একটা সার্ভে করা হয়েছিল সেই সার্ভেতে তখন থেকে স্পষ্ট আওয়ামী লীগকে জনগণ চায়, আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। তাই তারা নির্বাচন করার থেকেও সিট বিক্রি করা, সেখানে একটা বাণিজ্য করা অর্থাৎ নমিনেশন বাণিজ্যটাকেই তারা গুরুত্ব দিয়েছে। যার জন্য তাদের এই হাল।”
দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠন শক্তিশালী করার দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আগামী দিনের কর্মসূচি সম্পর্কেও আলোকপাত করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। এই উদযাপনের লক্ষ্য নিয়েই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। আমরা সরকারিভাবেও কমিটি করেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। পার্টির পক্ষেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা একটা কমিটিও করেছি। সেই কমিটির মাধ্যমে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করব।
“এই সময়টাকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকে এখানে আলাপ-আলোচনা করব।”
দলের নেতাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা প্রেসিডিয়াম মিটিং করেছি। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কার্যকরী সংসদের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে আমরা ৮টা বিভাগে ৮টা কমিটি গঠন করেছি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদই ছিল তাদের কাজ।
“আজকে দেশের মানুষ শান্তি পাচ্ছে। আমরা এইটুকুই চাই, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, সুন্দর জীবন পাবে। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত জীবন পাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দীর্ঘ সময় এই জাতির জীবনে ‘অন্ধকার নেমে এসেছিল’ এবং সেখান থেকে বাঙালির মুক্তি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, “কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি এই দেশের মানুষের জীবনে হয়নি। আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করেছে তখনই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।”