‘নীলনকশা’ হচ্ছে লন্ডন থেকে: কাদের

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, লন্ডন থেকে নির্বাচন বানচালের ‘নীলনকশা’ করছে তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2018, 10:39 AM
Updated : 5 Dec 2018, 10:49 AM

নির্বাচন কমিশন সরকারের ‘নীলনকশা’ বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে বিএনপির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার একথা বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “তারা নির্বাচন বানচালের নীলনকশা লন্ডন থেকে করছে। আমাদের কোনও নীলনকশা নেই। আমাদের নীলনকশা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের।”  

তারেক রহমান

দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় পদাধিকার বলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন তার বড় ছেলে তারেক রহমান, যিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রায় এক দশক ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছেন বিএনপি নেতারা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলায় তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলেও নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। এই প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে দলটি।

তাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “অসুস্থ পরিবেশ কোথায় সৃষ্টি হয়েছে এই নগরীতে? এই মুহূর্তে এই ঢাকা শহরে কোথায় পরিবেশ অসুস্থ? যেটুকু অসুস্থ হয়েছে সেটা পল্টনে তারা করেছে। আমি নিশ্চিত করে বলছি, আমাদের তরফ থেকে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে না। 

“আমরা কোনও বিশৃঙ্খলা করব না, এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছে। কিন্তু তারা যদি বিশৃঙ্খলা-নাশকতা করতে চায় তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।”

নির্বাচন নিয়ে কারও মধ্যে কোনো সংশয়-সন্দেহ নেই মন্তব্য করে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “কোনও মিডিয়াতে এ ধরনের সংশয় নিয়ে খবর প্রকাশ হয়নি। ইনশাআল্লাহ, নির্বাচন হবে। তারা সরে গেলেও হবে। নির্বাচন কারও জন্য আটকে থাকবে না। কেউ যদি সরেও যায়, নির্বাচন সরবে না। নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হব।”  

এবার বিজয়ের উৎসবের মতো ভোট হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সরকার ‘রাক্ষসের মতো’ মানুষ ‘খেয়ে ফেলছে’ এবং ১০ ডিসেম্বর থেকে জনগণ রাস্তায় নামবে বলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, “সরকার কী ভূমিকা পালন করছে সেটা জনগণ ৩০ তারিখের ভোটে বুঝিয়ে দেবে।

“মান্না সাহেব, অপেক্ষা করুন। ৩০ তারিখে বাংলার মানুষের রায়ে ভোট বিপ্লব হবে, তখন বুঝতে পারবেন আপনার ধারণা কত অবাস্তব।”

কয়েকটি আসনে দল ও ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাদের বলেন, “৯ তারিখ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপর সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করা হবে।” 

সোহরাওয়ার্দীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সকালে হাই কোর্ট সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দীর কবরে শ্রদ্ধা জানান দলটির নেতারা।

ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চরিত্র ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

মুসলিম লীগে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ধারাকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্বশীল ভূমিকা রাখেন সোহরাওয়ার্দী। পাকিস্তান আমলে তার নেতৃত্বেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরে এই দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে হয় আওয়ামী লীগ, যাদের নেতৃত্বে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।

১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের বৈরুতের এক হোটেলকক্ষে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উপমহাদেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

“তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি শ্রমজীবীসহ অবহেলিত মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।”