মনোনয়ন বাণিজ্যের রেকর্ড করেছে বিএনপি: কাদের

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এবার ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ রেকর্ড করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2018, 08:42 AM
Updated : 4 Dec 2018, 11:33 AM

মঙ্গলবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছি, গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে, বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্যে এবার রেকর্ড করেছে। এই যে ঋণখেলাপির কারণে এত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তারপরও তাদের ৫৫৫জন রয়েছে। এটা কি মনোনয়ন বাণিজ্য নয়?”

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য এবার যে ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল, তার মধ্যে ৭৮৬টি ররিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ে বাদ পড়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের তিনটি এবং বিএনপির ১৪১টি মনোনয়নপত্র রয়েছে।

বাতিলের খাতায় বিএনপির নাম বেশি এল কেন- এই প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগের ২৭৮ জনের মনোনয়ন টিকেছে, আর বিএনপির টিকেছে ৫৫৫ জন। তাহলে মনোনয়ন কার বেশি টিকেছে? নির্বাচনে তো অংশগ্রহণ করবে তিনশ জন, এর মধ্যে ঐক্যফ্রন্টকে দিতে হবে না? প্রার্থী হবে তিনশ, এখানে ৫৫৫ জন কোথা থেকে এল?”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকা নিয়ে’ ঢাকা থেকে ‘পালিয়েছেন’ বলে খবর পাচ্ছেন তারা।

সরকার নির্বাচন কমিশনকে ‘পুতুল নাচের’ আসর বানিয়ে ফেলেছে বলে যে অভিযোগ বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী করেছেন- সে বিষয়েও কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “তাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়াটাই একটা পুতুল নাচের খেলা। সরকার কেন করবে? নির্বাচন কমিশন কি সরকার? নির্বাচন কমিশন স্বাধীন কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণ করে যাচ্ছে।”

লন্ডন থেকে তারেক রহমানের নির্দেশেই বিএনপির ‘পুতুল নাচ’ চলছে দাবি করে কাদের বলেন, “যেমনি নাচাও তেমনি নাচে, পুতুলের কী দোষ? রশিটা লন্ডন থেকে টানছে। কামাল হোসেন তো  নামকাওয়াস্তে নেতা, অনেক দুঃখে কষ্টে নির্বাচনটাই করছেন না। নেতাও নেই, মাথাও নেই। এই দলকে কে ভোট দেবে! মানুষ জিজ্ঞেস করবে- কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, কী জবাব দেবেন মির্জা ফখরুল সাহেব?”

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের যে অভিযোগ বিএনপি এনেছে, তাও অস্বীকার করেন সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের। 

“যখন নির্বাচন কমিশন তাদের পক্ষে না থাকে, তখন তো নির্বাচন কমিশন সৎ মা হয়ে যায়। এখন নির্বাচন কমিশন যদি তাদেরকে গ্যারান্টি দিতে পারে যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করবে, তাহলে তাদের কাছে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হবে।“   

জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে পদে পরিবর্তনের কারণে মহাজোটের প্রার্থী মনোনয়নে কোনো টানাপড়েন সৃষ্টি হবে কি না- এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বহিষ্কারের বিষয়টা তাদের ব্যাপার, এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। আর এ নিয়ে মহাজোটের যে ঐক্য প্রক্রিয়া, এখানে প্রভাব পড়বে না।”

মনোনয়নপত্র বাদ পড়ায় এবারের নির্বাচনে যে জিয়া পরিবারের কেউ থাকছেন না- সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণে করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে আদালতে, অর্থ আত্মসাতের কারণে। জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগের নেই।

“বিএনপি একটা বড় দল, তারা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে থাকলে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। গণতন্ত্র দুই চাকার বাই সাইকেল। একদিকে সরকারি দল অন্যদিকে অপজিশন। অপজিশানকে বাদ দিয়ে তো সংসদীয় গণতন্ত্র হয় না। কাজেই এখানে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। জিয়া পরিবারই বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করেছে।”

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং পাবনায় চরের দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হওয়ার বিষয়েও ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “দেশে একটা অশান্তি অস্থিরতা তারা সৃষ্টি করতে চায়, কারণ তারা জেনে গেছে, বুঝে গেছে আগামী নির্বাচনে তাদের জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা নির্বাচন বানচালের জন্য দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশটাকে বিঘ্নিত করতে চাইছে।

“নিজেরা কোনো আন্দোলন করতে পারেনি, অন্যদের ইস্যুতে নাক গলাচ্ছে, অন্যদের ইস্যুতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে কি না সেই অপচেষ্টা তাদের আছে।”

পাবনায় সংঘর্ষের ঘটনাটি যে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ছিল, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাদের বলেন, “এ ধরনের ঘটনা সামাজিক ব্যাপারেও হতে পারে। নরসিংদীদের ৫০ বছর ধরে ঘটে আসা সামাজিক দ্বন্দ্বকেও দলীয় হিসেবে অনেকে প্রচার করেছে। এখন পাবনার ঘটনা সেরকম কিছু হতে পারে।”

অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।