ঢাকায় বাদ পড়া বিএনপির সাতজনই ঋণ খেলাপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মহানগরীর ১৫টি আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ৫২ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে সাতজনই বিএনপির প্রত্যয়নে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। 

তাবারুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2018, 06:57 PM
Updated : 2 Dec 2018, 08:42 PM

বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসসহ ধানের দলটির এই নেতাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে ঋণ খেলাপের কারণে।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হয়।

সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা (বিভাগীয় কমিশনার) কে এম আলী আজম সাংবাদিকদের বলেন, “বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রগুলোর ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ঋণ খেলাপি। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সম্বলিত প্রতিবেদন যাচাই করে সত্যতা না পাওয়ার কারণে।”

মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ উল্লেখ করে একটি লিখিত আদেশ সোমবার দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই আদেশের বিরুদ্ধে ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ রয়েছে।

ঢাকা-৫ আসনে ধানের শীষের প্রত্যয়ন নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া।

এ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, সেলিম ভূঁইয়ার নামে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে প্রতিবেদন এসেছে সেখানে তিনি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের একজন ঋণ খেলাপি। এ সময় পুলিশ প্রতিনিধি জানান, তার বিরুদ্ধে ২১টি মামলা রয়েছে।

ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন নাসিমা আক্তার কল্পনা, তিনি বিএনপির প্রয়াত নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী।

নাসিমার মনোনয়ন বাতিলের কারণ হিসেবে সোনালী, রূপালি ও অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে লাখ লাখ টাকার ঋণ খেলাপের তথ্য জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ঢাকা-৮ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন সাজ্জাদ জহির।

তার মনোনয়নপত্র বাতিল করার কারণ হিসেবে পুবালী ব্যাংকের বাবুবাজার শাখা থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাকে ঋণ খেলাপি চিহ্নিত করার কথা জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির হয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ঋণ খেলাপের কারণে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ খেলাপি বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকে গ্যারান্টার হিসেবে ঋণ খেলাপি এবং ঢাকা টেলিফোনে তিনি দায়বদ্ধ বলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির প্রত্যয়নে মনোনয়নপত্র দাখিল করা সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু আইডিএলসিসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপি বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপির একেএম মোয়াজ্জেম হোসেনের মনোননয়নপত্র বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে তিনি জনতা ব্যাংকের একজন ঋণ খেলাপি।

ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী শওকত আজিজের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে ঋণ খেলাপের কারণে।পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাশেমের ছেলে শওকত লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্স করপোরেশন ও জনতা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের মনোনয়নপত্রও প্রথমে বাতিল করা হয়েছিল। ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক বিকালে আয়কর ও ঋণ পরিশোধের প্রতিবেদন দেখালে তার মনোনয়নপত্র গৃহীত হয়।

ঢাকায় টিকলেন যারা

ঢাকা-৪

বিএনপির তানভীর আহমেদ ও সালাহউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন, জাকের পার্টির মো. আজাদ মাহমুদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. শাহ আলম, জাসদের মো. হাবিবুর রহমান শওকত, গণফ্রন্টের সহিদুল ইসলাম মোল্যা,  ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সুমন কুমার রায় এবং ইসলামী আন্দোলনের সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ।

ঢাকা-৫

আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা ও কাজী মনিরুল ইসলাম, বিএনপির মো. নবীউল্লাহ, গণফোরামের এসএম আলতাফ হোসেন, জাতীয় পার্টির মীর আব্দুস সবুর, ন্যাপের মো. আব্দুর রশিদ ওরফে আব্দুর রশিদ সরকার, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. আব্দুল কাইয়ুম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আরিফুর রহমান (সুমন মাস্টার), ইসলামী আন্দোলনের মো. আলতাফ হোসেন, জাকের পার্টির মো. রবিউল ইসলাম এবং গণফ্রন্টের শামীম মিয়া।

ঢাকা-৬

বিএনপির ইশরাক হোসেন ও কাজী আবুল বাশার, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জাসদের কাজী সালমা সুলতানা, মুসলিম লীগের ববি হাজ্জাজ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আকতার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মো. আবু তাহের হোসেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) সৈয়দ নাজমুল হুদা, ইসলামী আন্দোলনের হাজী মো. মনোয়ার খান এবং গণফ্রন্টের আহমেদ আলী শেখ।

ঢাকা- ৭

আওয়ামী লীগের হাজী মো. সেলিম ও হাজী আবুল হাসনাত, বিএনপির মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, বাসদের খালেকুজ্জামান, জাতীয় পার্টির তারেক আহমেদ আদেল, জাকের পার্টির বিপ্লব চন্দ্র বনিক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (স্বতন্ত্র), গণফোরামের মোস্তফা মহসীন মন্টু ও মো. মোশাররফ হোসেন, গণফ্রন্টের মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, মুসলিম লীগের মো. আফতাব হোসেন মোল্লা, ইসলামী আন্দোলনের মো. আব্দুর রহমান, বিএনএফের মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, , ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মাসুদ পাশা এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. হাবিবুল্লাহ। 

ঢাকা-৮

বর্তমান সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এখানে আবারো ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হচ্ছেন। এখানে তার প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকছেন বিএনপির মির্জা আব্বাস। এর বাইরে রয়েছেন আবু নোমান মোহাম্মদ জিয়াউল হক মজুমদার (ইসলামী ঐক্যজোট), আবুল কালাম আজাদ (প্রগতীশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি), আব্দুস সামাদ সুজন (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট), এমএ ইউসুফ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, জেএসডি), মিনি খাঁন (জাতীয় পার্টি), মো. আবুল কাশেম (ইসলামী আন্দোলন), মো. ইউনুস আলী আকন্দ (জাতীয় পার্টি), মো. ছাবের আহাম্মদ (কাজী ছাব্বীর)- ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), মো. জাকির হোসেন (গণফ্রন্ট), মো. নজরুল ইসলাম লিটন (জাকের পার্টি),  শম্পা বসু (বাসদ), সুমি আক্তার শিল্পী (ন্যাপ) এবং হাসিনা হোসেন (মুসলীম লীগ)।

ঢাকা-৯

আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী ও বিএনপির হাবিবুর রশিদ এখানে প্রার্থী হিসেবে টিকে আছেন। এর বাইরে মাহফুজা আক্তার (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), মোহাম্মদ মানিক মিয়া (ইসলামী আন্দোলন), মোহাম্মদ শফিউল্লাহ চৌধুরী (বিএনএফ), মো. আ. মোতালেব (মুসলিম লীগ) এবং মো. হুমায়ন কবির (জাকের পার্টি)।

ঢাকা-১০

আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের পাশাপাশি বিএনপির আবদুল মান্নান, নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম ও শেখ রবিউল আলমের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে এখানে। এছাড়া কেএম শামসুল আলম (এনপিপি), মো. আ. আওয়াল (ইসলামী আন্দোলন), মো. বাহরানে সুলতান বাহার (পিডিপি), মো. হেলাল উদ্দিন (জাতীয় পার্টি) প্রার্থী হিসেবে টিকে গেছেন।

ঢাকা-১১

আওয়ামী লীগের একেএম রহমতুল্লাহ, বিএনপির এ জি এম শামসুল হক ও শামীম আরা বেগমের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। এছাড়া এস এম ফয়সল চিশতী (জাতীয় পার্টি), মোজাম্মেল হক (গণফোরাম), মো. আমিনুল ইসলাম (ইসলামী আন্দোলন), মো. আব্দুল বাতেন (জাতীয় পার্টি), মো. মিজানুর রহমান (এনপিপি), মো. মেহেদী মাসুদ (বিএনএফ), শরীফ মো. মিরাজ হোসাইনের (মুসলিম লীগ) মনোনয়নপত্র গৃহীত হয়েছে।

ঢাকা-১২

আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পাশাপাশি বিএনপির সাইফুল আলম নীরব ও আনোয়ারুজ্জামান, মো. জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি (বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি), মো. নাসির উদ্দিন সরকার (জাতীয় পার্টি), মো. মজিবুর রহমান (জেএসডি), মোহাম্মদ শওকত আলী হাওলাদার (ইসলামী আন্দোলন), শাহীন খান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি)।

ঢাকা-১৩

আওয়ামী লীগের মো. সাদেক খান, বিএনপির মো. আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী ও আতিকুল ইসলাম মতিন, খান আহসান হাবীব (বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি), দুলাল কান্তি লালা (বিএনএফ), মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম (ইসলামী ফ্রন্ট), মো. কামরুল আহসান (তরিকত ফেডারেশন), মো. জিয়াদুল করিম টিপু (প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল), মো. মাহবুবুর রহমান (বিকল্প ধারা), মো. মুরাদ হোসেন (ইসলামী আন্দোলন), মো. শফিকুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি)।

ঢাকা-১৪

আওয়ামী লীগের মো. আসলামুল হক, বিএনপির মো. আমিনুল হক ও মুন্সি বজলুল বাসিদ আঞ্জু, মো. আনোয়ার হোসেন (বিএনএফ), মো. আবু ইউসুফ (ইসলামিক আন্দোলন), মো. কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী (জেএসডি), মোস্তাকুর রহমান (জেপি) ও রিয়াজ উদ্দিন (বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি)।

ঢাকা-১৫

আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার, বিএনপির এসএম আসাদুজ্জামান রিপন ও ডা. মো. শফিকুর রহমান, আহাম্মদ সাজেদুল হক (বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি), এইচএম গোলাম রেজা (বিকল্পধারা), এস এম ইসলাম (বিএনএফ), মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম (জাসদ) ও মো. আব্দুল মান্নান মিঞা (জাকের পার্টি)।

ঢাকা-১৬

আওয়ামী লীগের মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, বিএনপির মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ হাসান, আলী আহমেদ (জাকের পার্টি), নাঈমা খালেদ মনিকা (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি), মহা. ছিদ্দিকুর রহমান (ইসলামী আন্দোলন), মো. ফরিদ উদ্দিন শেখ (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি)।

ঢাকা-১৭

আওয়ামী লীগের আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ও আবদুল কাদের খান, বিএনপির রুহুল আলম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, আন্দালিভ রহমান পার্থ (বিজেপি), আলী হায়দার (পিডিপি), এসএম আবুল কালাম আজাদ (বিএনএফ), এসএম আহসান হাবিব (বাসদ), কাজী মো. রাশিদুল হাসান (জাকের পার্টি), নজরুল ইসলাম (জেএসডি), মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বিকল্পধারা), মো. আমিনুল হক তালুকদার (ইসলামী আন্দোলন), মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন (স্বতন্ত্র), অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল একেএম সাইফুর রশিদ (বিকল্প ধারা)।

ঢাকা-১৮

আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন, বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার আ. ন. হ আখতার হোসেন ও এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, এসএম শাহাদাত (জাগপা), মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), অবসরপ্রাপ্ত মেজর আমীন আহমেদ আফসারী (গণফোরাম), মোহাম্মদ আবদুল মোমেন (ইসলামী ফ্রন্ট), মো. আতিকুর রহমান নাজিম (বিএনএফ), মো. আনোয়ার হোসেন (ইসলামী আন্দোলন), মো. রফিকুল ইসলাম (প্রগতীশীল গণতান্ত্রিক দল), মো. রেজাউল ইসলাম স্বপন (মুসলিম লীগ) ও শেখ শহিদুজ্জামান (বিএনএফ)।