নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে রিজভীর প্রশ্ন

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2018, 08:18 AM
Updated : 28 Nov 2018, 09:17 AM

বুধবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি প্রশ্নসাপেক্ষ। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের নানা ষড়যন্ত্র, কারসাজিতে সেই একতরফা নির্বাচনের আভাসই ফুটে উঠতে আমরা দেখছি।”

এর ব্যাখ্যায় পত্রিকার খবরের বরাত দিয়ে দিয়ে রিজভী বলেন, “৮৫টি উপজেলায় নির্বাচনী কর্মকর্তা নেই। এ অবস্থায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বাছাই করে আওয়ামীমনা কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে। এর মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে সরকারের চক্রান্তের গভীরতা ও ব্যাপ্তি আরও স্পষ্ট হচ্ছে।”

এই বিএনপি নেতার ভাষায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘গেইম প্ল্যান’ খুব স্পষ্ট।

“সেটি হল বাংলাদেশে একটি পক্ষই থাকবে- আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। কোনো ভিন্নমত, ভিন্ন বিশ্বাস থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ নেতাদের কথা-বার্তা, কারুকার্য-মেকানিজমে বোঝা যাচ্ছে, তারা ভোট ডাকাতির একটা নির্বাচনই আয়োজন করছে।”

বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠানো সরকারের উপসচিব নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়াকে র‌্যাব-২ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, “ঘণ্টাখানেক কথা বলবে বলে গতকাল রাত ১০টায় তাকে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাকে তু্লে নিয়ে গিয়ে এখনো ফিরিয়ে না দেওয়া ভয়ঙ্কর বার্তা।”

তিনি বলেন, দুদিন আগে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নিয়ামত উল্লাহ নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল। এ কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ‘টার্গেট’ করেছে।

নিয়ামত উল্লাহকে অবিলম্বে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায়  পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন থেকে।

প্রয়াত বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের ছেলে যশোর-৩ আসনে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের ঢাকার বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলেও দাবি করেন রিজভী।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তার চলছে অভিযোগ করে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

‘অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক’

নির্বাচনে খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়া নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্যকে ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ বলেছেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেলের মন্তব্যে দেশবাসী স্তম্ভিত, হতবাক। তিনি সাফ বলে দিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের অযোগ্য।”

আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয়ে নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধান ও আদালতের ‘অবমাননা’ করেছেন বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

মঙ্গলবার এক মামলার আদেশের সঙ্গে হাই কোর্টের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।

এর ফলে দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আপিল করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগও আটকে যায়।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

হাই কোর্টের আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ওই দুই মামলায় আপিল করে খালাস পেলে বা সাজা বাতিল হলেও পাঁচ বছর সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না খালেদা।

এর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়া অবশ্যই নির্বাচন করতে পারবেন। এ বিষয়ে আইনে কোনো বাধা নেই।”

বিচারিক আদালতে সাজার রায়ের পর আপিল চলমান অবস্থায় বর্তমান সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কী করে নির্বাচন করেছিলেন- সেই প্রশ্ন অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে রাখেন রিজভী।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নাজমুল হক নান্নু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অবসরপ্রাপ্ত সচিব খান মুহাম্মদ ইব্রাহিম উপস্থিত ছিলেন।