শুক্রবার বিকালে বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ের পর ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “দুই ঘণ্টা আমরা সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তারা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিয়েছেন, আমাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের কাছ থেকে তারা কী আশা করেন।”
নির্বাচন সামনে রেখে গত ১৩ অক্টোবর গঠিত সরকারবিরোধী এই মোর্চায় কামাল হোসেনের গণফোরামের সঙ্গে আছে বিএনপি, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।
গত ১৮ অক্টোবর কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর শুক্রবার তারা গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে বসলেন।
কামাল বলেন, “এই মতবিনিময় আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান বলে মনে করি। সরকারের যেসব জিনিস আমরা চিহ্নিত করেছি, আমরা আশা করব যে এসব ব্যাপারে সংবাদমাধ্যম সজাগ দৃষ্টি রাখবে।”
সম্পাদকদের কাছে কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরনের সহযোগিতা চেয়েছি।”
“সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারের যেমন কর্তব্য আছে, আমরা যারা বিরোধী দল নির্বাচন করতে যাচ্ছি, নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা করা আমাদেরও কর্তব্য, যাতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়।”
মতবিনিময় সভা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে এসে ‘আমাদের নতুন সময়’ এর সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান বাইরে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি সাম্প্রতিক সময়ে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাগুলো কোরআন তেলাওয়াত, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো তাদের ঐক্যবদ্ধ চিন্তার ফল কিনা? এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নির্বাচনের আগে তারা আমাদের সামনে তুলে ধরবেন কিনা।
“আমি জানতে চেয়েছি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর যে উৎসব হবে, তারা জয়ী বা পরাজিত হলে তা কীভাবে পালন করবেন। এসব প্রশ্নের নোট তারা নিয়েছেন, বলেছেন পরে উত্তর দেবেন।”
তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এই ফ্রন্টের যারা নির্বাচন করছে, তাদের বলতে হবে যে, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তারা যদি বিজয়ী হন, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে।
“যেমন আমরা ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থা অনুসরণ করার চেষ্টা করি। ভারতে হোক, ব্রিটেনের হোক বা অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে… সবাই কিন্তু আগে থেকে জানেন যে, এই দল বা এই জোট বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। সেই বিষয়টা কিন্তু এই ফ্রন্টকে স্পষ্ট করতে হবে। সেটা তারা এখনো স্পষ্ট করেননি।”
গুলশানের হোটেল লেইকশোরে এই মতবিনিময় সভার শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্পাদকদের স্বাগত জানিয়ে জাতীয় যুক্তফ্রন্টের নেতৃবৃন্দকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর ফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন বক্তব্য দেন।
প্রথম আলোর মতিউর রহমান, হলিডের সৈয়দ কামালউদ্দিন, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তৌফিক ইমরোজ খালিদী, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ এর নুরুল কবীর, আমাদের নতুন সময়ের নাইমুল ইসলাম খান, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, দিনকালের রেজোয়ান সিদ্দিকী এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ভয়েস অব আমেরিকার আমীর খসরু, রয়টার্সের সিরাজুল ইসলাম কাদির, এএফপির শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এ বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের মতামত শোনেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
জোটের নেতাদের মধ্যে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জেএসডির আসম আবদুর রব, তানিয়া রব, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মনটু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ উপস্থিত ছিলেন মত বিনিময়ে।
এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আসদুজ্জামান রিপন, শামা ওবায়েদসহ ফ্রন্টের শরিক নেতারাও ছিলেন।