ঐক্যফ্রন্টে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কে আছে, প্রশ্ন কাদেরের

নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মত নেতা কে আছেন, সেই প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2018, 07:18 AM
Updated : 15 Nov 2018, 06:25 PM

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি জানতে চাই। দেশবাসীও জানতে চায়। বলুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? ড. কামাল হোসেন না তারেক রহমান? কে হবেন? হু ইজ দেয়ার পিএম ফেইস।”

বিএনপিসহ কয়েকটি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ছিল তাদের ওই সাত দফার মধ্যে।

এসব দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফা সংলাপে বসেছিলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সেখানে কোনো সমঝোতা না হলেও তারা ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। 

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন পোছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করেছে ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু সেখানেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের সংশয় কাটেনি। 

বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলে আসছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জনগণ বিপুল ভোটে তাদের বিজয়ী করবে, ‘প্রত্যাখ্যান’ করবে আওয়ামী লীগকে। আর এ বিষয়টি নিয়েই টিপ্পনি কেটেছেন কাদের।  

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য ইতোমধ্যে তিনটি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির নেতারা। কিন্তু দুর্নীতির দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় আদৌ তিনি ভোট করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সংশয় এখনও কাটেনি।

আর খালেদার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত এক দশক ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন লন্ডনে। দুর্নীতির দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলায় হয়েছে যাবজ্জীবন সাজার রায়।

বিএনপির এই দুর্দিনে স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দল সামলাচ্ছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাত দফা দাবি নিয়ে সরকারকে আলোচনার টেবিলে বসাতেও তাদের কামাল হোসেনের সঙ্গে জোট বাঁধতে হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে কামাল হোসেনকে তাদের ‘প্রধান নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করে। ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন জনসভায় তাকে দেখা গেছে ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে, আর মির্জা ফখরুল ছিলেন ‘প্রধান বক্তা’।  

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার মুখে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো পদ পাওয়ার ইচ্ছা তার নেই। আর তারেক রহমান সাজা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরবেন- এমন কোনো ইংগিতও এখনও পাওয়া যায়নি।

ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো একসঙ্গে নির্বাচনে গেলে আসন ভাগাভাগি কীভাবে হবে- সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জোটের নেতারা। সেক্ষেত্রে তারা সরকার গঠন করতে পারলে কে হবেন সেই সরকারের প্রধান- সেই প্রশ্নই ওবায়দুল কাদের সামনে এনেছেন।

তিনি বলেন, “তারা যে একটা ইলেকশন করবে... যে কোনো দেশেই... দলের একজন পিএম ফেইস থাকে। আমি জানতে চাই হু ইজ দেয়ার পিএম ফেইস।”

‘এক ঘণ্টাও নির্বাচন পেছাতে চাই না’

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন পেছানোর দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যায়িত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা এক ঘণ্টাও পেছাতে চাই না। তাদের নির্বাচন পেছানোর দাবি একেবারে অযৌক্তিক। একবার তো পিছিয়েছে, আমরা কোনো প্রশ্ন করিনি, আপত্তি করিনি। এখন আবার কেন?”

নির্বাচন কমিশন প্রথম দফার তফসিলে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ঠিক করলেও নির্বাচন এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। এরপর ইসি নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ঠিক করে পুনঃতফসিল দিলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি ও তাদের শরিকরা।

বুধবার নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ‘পরিকল্পিত’ ছিল অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আন্দোলনের নামে তারা সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে। গতকাল তারা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। নির্বাচন ঘিরে তাদের উদ্দেশ্য কী, তারা নির্বাচনে যেতে চান? না নির্বাচন বানচাল করতে চান? সাধারণ মানুষকে বুঝতে হবে এ ঘটনার জন্য কোন পক্ষ দায়ী।”

ওই সংঘর্ষের জন্য সরকারকে দায়ী করে যে বক্তব্য বিএনপি নেতারা দিচ্ছেন, সেজন্য তাদের ‘মিথ্যাবাদী’ আখ্যায়িত করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীকে উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, “তিনি এত মিথ্যা কথা বলবেন! পল্টন অফিসে একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ার, মির্জা ফখরুল গতকালের ঘটনায় যে মন্তব্য করেছেন এটা কেউ বিশ্বাস করবে? নয়া পল্টনের অফিসে বসে মিথ্যাচার অবিরাম চলছে, একই সুরে বলছে, তিনি এত মিথ্যা কথা বলতে পারেন!”

কাদের বলেন, “এ ঘটনা পরিকল্পিত, গতকালের ঘটনা ব্লুপ্রিন্টের রেজাল্ট, টেস্ট কেইস প্রদর্শিত হয়েছে। তাদের এই নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের যে অশুভ তৎপরতা গতকাল তার ডেমনেস্ট্রেশন করেছে, এ অশুভ তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।”

নির্বাচানকালীন সরকারে আর কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন,“আমাদের সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু নেই। সব দেশে যখন নির্বাচন হয় তখন সরকার দেশ চালানোর দায়িত্বে থাকে। টেকনোক্রেট কেউ থাকবে না, এটা প্রধানমন্ত্রী অ্যাপ্রুভ করে তাদের বিষয়টা দেখবেন, মন্ত্রিসভা বাড়ানোর আশংকা নেই, কমানোর ব্যপারটা এখনো পরিষ্কার নয়, দুই তিন দিনের মধ্যে ক্লিয়ার হবে।”