বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে: সংলাপ শেষে সেলিম

সংলাপে নিজেদের দাবি-দাওয়া জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, এখন সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের উপর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2018, 01:57 PM
Updated : 6 Nov 2018, 06:14 PM

মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে এই বাম জোট আটটি দাবি তুলে ধরে; তার মধ্যে রয়েছে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, ইসি পুনর্গঠন, ইভিএম ব্যবহার না করা, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ইত্যাদি।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচনার শেষে বেরিয়ে সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, “বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে। তিনি বিবেচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেন, তার উপরই নির্ভর করে নির্বাচনটি কেমন হবে।”

এই দাবি পূরণ না হলে বাম জোট নির্বাচনে যাবে কি না, তা নিয়ে সুস্পষ্ট করেননি মোর্চার নেতারা।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী সিপিবির সভাপতি সেলিম বলেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবেন।

“আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি, পাশাপাশি পরিস্থিতি অনুকূল না হলে বয়কটের জন্যও প্রস্তুত আছি।”

সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি বাম জোটের নেতারা

বাম জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা নির্বাচন করতে চাই, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তারা এগুলো পূরণ করবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের দাবি-দাওয়া লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করি, সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবে।”

দেশ ও জনগণকে আশ্বস্ত করার স্বার্থে এসব দাবি পূরণে সংবিধান সংশোধন করতে হলে সে উদ্যোগও ক্ষমতাসীনরা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন সাইফুল হক।

একই ধরনের দাবি কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও জানিয়েছে সংলাপে। তবে শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছে, কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যাবেন না তারা।

বাম জোটের সঙ্গে সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “অনেক কিছুতেই আমাদের মতের সাথে তারা একমত, কিছু কিছু ভিন্নমতও আছে।

“আমাদের নেত্রী তাদের সব কথা শুনেছেন। ভিন্নমত উপস্থাপনের জন্যও আমাদের নেত্রী তাদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন।”

সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

বুধবার পর্যন্ত সংলাপের পর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার ফলাফল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান কাদের।

নির্বাচন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে মতবিরোধের মধ্যে কামাল হোসেনের উদ্যোগে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের সংলাপে ডাকেন শেখ হাসিনা। এরপর অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংলাপের আমন্ত্রণ জানান তিনি। 

এরই ধারায় মঙ্গলবার সিপিবি-বাসদ নেতৃত্বাধীন বাম জোট প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়ি গণভবনের ব্যাঙ্কোয়েট হলে সংলাপে অংশ নিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের নেতারা সংলাপে অংশ ছিলেন। অন্য দিকে ছিলেন বাম জোটের ১৬ নেতা। 

বাম জোটের যারা ছিলেন, তারা হলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটি সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ও আলমগীর হোসেন দুলাল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য মোমিনুর রহমান বিশাল, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রনজিৎ কুমার।

গণভবনে সংলাপে বাম জোটের নেতারা

সংলাপে বাম জোটের লিখিত বক্তব্যে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, মানুষের ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আসা আওয়ামী লীগ আজ জনগণের অবাধ ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

“আমাদের বিবেচনায় দশকের পর দশক জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াই এর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের এটি একটি বড় রাজনৈতিক পরাজয়।”

দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে বাম জোট বলেছে, “এই অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের বড় অংশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা রয়েছে।

“মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কি না, নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না, তাদের ভোট যথাযথভাবে গণনা হবে কি না, নির্বাচনের আগে ও পরে আবারও তারা কোনো সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে কি না ইত্যাদি নানা প্রশ্ন মানুষের মধ্যে রয়েছে।”

কার্যকর ও দায়িত্বশীল সংসদীয় ব্যবস্থা এবং পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বাংলাদেশে এখনও গড়ে ওঠেনি দাবি করে দলীয় সরকারের পরিবর্তে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছে বাম জোট।

“অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি গণতান্ত্রিক ধারায় সক্রিয় রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সংবিধানের মধ্যেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করা সম্ভব। সংবিধানের মধ্যেই প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের ধারাও রয়েছে।

“সংসদ যেহেতু এখনও বহাল রয়েছে এবং সংসদে আপনাদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকলে এই জন্যে আপনারা প্রয়োজনীয় সংশোধনীও নিয়ে আসতে পারেন,” প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছে বাম জোট।

বাম জোটের ৮ দফা

>> নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে সব দল ও সমাজের অপরাপর মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করতে হবে।

>> নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।

>> জনগণের আস্থাহীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। 

>> সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ টাকার খেলা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রশাসনিক কারসাজিনির্ভর বিদ্যমান গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। 

>> আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম চালুর পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।

>> রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে নাশকতা ও বিশৃংখলার কারণ দেখিয়ে দেশব্যাপী যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। এসব মামলায় যে গণ-হয়রানি ও গ্রেফতার করা হচ্ছে অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। ৫৭ ধারায় রুজু করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

>> নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধার, মাদক নির্মূল ও জঙ্গী সন্ত্রাসী গ্রেফতারের নামে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে।

>> নাগরিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা, মুক্ত ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পরিপন্থি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ ও সম্প্রচার বিধিমালার অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে।