শেখ হাসিনার পদত্যাগ সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি: বিএনপি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে বর্ণনা করে ফের তার পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2018, 11:59 AM
Updated : 13 Sept 2018, 11:59 AM

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় প্রধানমন্ত্রী নিজে। সুতরাং ইসিকে তার সহযোগিতা দেওয়ার অর্থই হলো আগামী নির্বাচনে ফন্দিফিকির করার জন্যই যে তিনি সহযোগিতা দেবেন এতে কোনো সন্দেহ নাই।

“আমরা বলে দিতে চাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের একমাত্র গ্যারান্টি শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।”

নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী দল দমনে সরকার ‘গোপন ছক’ আঁটছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে সরকার নিজ দলের ক্যাডারদের দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর এর দায় চাপাবে। ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা ধরনের জ্বালাও-পোড়াওসহ নাশকতা করা হবে পরিকল্পিতভাবে।

“এজন্য নাকি আওয়ামী ক্যাডারদের সহযোগিতা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে এই কথাগুলো শুনছি।”

তিনি বলেন, সরকার এক ‘গোপন সহিংস পরিকল্পনার ছক’ আঁটছে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে জনগণের সামনে নানাভাবে বিভ্রান্ত ও কালিমালিপ্ত করার জন্য। যেভাবে তারা ২০১৪  ও ২০১৫ সালে বিরোধী দলের আন্দোলনে নিজেরাই নাশকতা করে বিএনপির ওপর এর দায় চাপিয়েছে।

“ছাত্রলীগের এক নেতা বলছেন তার ফেইসবুক একাউন্টে- ‘দেখছিস আমরা ঘটালাম আর বিএনপির নেতা-কর্মীরা মামলা খাইল। এই পরিস্থিতি করার জন্য তারা একটা অশুভ পরিকল্পনা আঁটছেন তা চারিদিকে শোনা যাচ্ছে।”

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা এম এ মালেক, সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, শহীদুল ইসলাম বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, মনির খান, হাসান মামুন, রফিক শিকদার, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ, শেখ মো. শামীম, ফেরদৌসী আক্তার ওয়াহিদা, সাবেরা আলাউদ্দিন, কাজী মফিজুর রহমানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ দায়েরের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন রিজভী।

“এই টাটকা ডাহা মিথ্যাচার করেন আপনারা... গুরুতর অসুস্থ মানুষ তরিকুল ইসলাম এদেশের বর্ষীয়ান নেতা তিনি যাবেন নাশকতা করতে?”

ওই নেতারা বিএনপি করেন বলেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

“আপনারা গোরস্তান থেকে লাশকে দিয়ে ককটেল ফাটাচ্ছেন, আপনারা হজ্বব্রত পালনরত ব্যক্তির নামে একই সময়ে বাংলাদেশে নাশকতার মামলা দিচ্ছেন। আপনারা কি বিকৃত মনের অধিকারী হয়ে গেলেন?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘বেপরোয়া’ হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-উপদেষ্টারা ক্রমাগত মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগও করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আইন, বিচার, মামলা, মোকাদ্দমা, সবই শেখ হাসিনার করায়ত্তে। দেশের সর্বত্র বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, গ্রেপ্তার, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, মিথ্যা মামলার ছড়াছড়ি। সব কিছুই শেখ হাসিনার নির্দেশেই হচ্ছে; আইনের শাসন ও সুবিচার যবনিকার অপর প্রান্তে চলে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসম্ভব শক্তিমান। তাই যে কোনো সময় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দমনের তরবারি নিয়ে তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন দিগ্বিদিক। মোমবাতি নিভে যাওয়ার আগে যেমন দপ করে জ্বলে উঠে, তেমনি পতনের আগে ব্যাপক দমননীতির আশ্রয় দিয়েছে সরকার।”

নয়া পল্টনে সকালে মহানগর কার্যালয়ের ভাসানী মিলনায়তনে পূর্বঘোষিত একটি আলোচনা সভা পুলিশ করতে না দেওয়ার ঘটনারও নিন্দা জানান তিনি।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, সাইফুল ইসলাম পটু, ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক ও কৃষক দলের শাহজাহান মিয়া সম্রাট এসময় উপস্থিত ছিলেন।