গুলশান-সেনানিবাস আসনে প্রার্থী হতে নেমেছেন এরশাদ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হতে গণসংযোগে নেমে পড়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2018, 12:06 PM
Updated : 6 Sept 2018, 03:12 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহজাদপুর, কড়াইল ও মহাখালী কাঁচা বাজার এলাকায় গণসংযোগ করে তিনি এই আসনটিতে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।

বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ। কিন্তু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদনের পর নাটকীয় অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এরশাদ। পরে ঢাকা-১৭ আসনে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হলেও রংপুরে পৈত্রিক এলাকায় তার মনোনয়নপত্র বহাল রাখেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ওই আসন থেকে এরশাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বেও রয়েছেন।

এরশাদের অনুপস্থিতিতে ঢাকা-১৭ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নতুন দল বিএনএফের শীর্ষনেতা আবুল কালাম আজাদ। এই আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক বিএনপি ছেড়ে আসা নাজমুল হুদাও। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন সাবেক সংসদ সদস্য অভিনেত্রী সারা বেগম কবরীও।

এরশাদ তার ‘শেষ’ নির্বাচনের জন্য ভোট চেয়ে শাহজাদপুরে গণসংযোগের সময় বলেন, “হয়ত এটাই শেষ নির্বাচন। আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমি আমার এই রাজনৈতিক জীবন শেষ করতে চাই।

“আপনারা বলেন, আমি দেশের জন্য, এই ঢাকা শহরের জন্য কী কী করেছি। আপনারা আমাকে আবার সুযোগ দেবেন। এ কথা আমি বলতে পারি, আমি যা করেছি, তার চেয়ে ভালো আর কেউ করতে পারেনি।”

৮৮ বছর বয়সী এরশাদ বলেন, “বলা হচ্ছে, আমার না কি বয়স হয়েছে! কিন্তু আমার কী বয়স হয়েছে? মানুষের ভালোবাসার টানে আমি আবারও ফিরে এসেছি।”

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্রপ্রধানের পদে আসীন আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা ক্ষমতা দখল করেছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ। সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার তিনি জাতীয় পার্টি গঠন করেন।

১৯৯০ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে গণআন্দোলনে এরশাদের পতন ঘটলেও সরকার গঠনের জন্য দুই দলের কাছেই তার আবেদন রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিত্রতা করে গত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবেন বলে ইঙ্গিত ইতোমধ্যে দিয়েছেন এরশাদ।  

গণসংযোগের সময় তিনি বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারেরও সমালোচনা করেন।

এরশাদ বলেন, “আমি যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করি, তখন চালের দাম ছিল ১০ টাকা। এখন শুনছি তা ৭০-৮০ টাকা। হিসাব নাই, কোনো হিসাব নাই। কোনো কন্ট্রোল নাই, দেখার কেউ নাই। 

“তারা ব্যস্ত কীভাবে ক্ষমতায় কিভাবে থাকা যায়, ব্যস্ত কিভাবে ক্ষমতা হাসিল করা যায়। মানুষের কথা তারা চিন্তা করে না।”

নির্বাচন সামনে রেখে আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। বৃহস্পতিবার ঢাকা ১৭ আসনের শাহজাদপুর, কড়াইল ও মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকায় তিনি গণসংযোগ করেন। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যদি শান্তি চান, পরিবর্তন চান, তাহলে আরেকবার আমাদের সুযোগ করে দেন। দুই সরকারের দুঃশাসন থেকে যদি নিস্তার চান, তবে আমাদের ভোট দিন। ক্ষমতায় আসলে এসব দুঃসহ জ্বালা থেকে আপনাদের মুক্তি দিতে পারব।

“আমি কথা দিতে পারি, আমরা ক্ষমতায় আসলে মানুষ আর গুম, খুন দেখবে না। আমাদের আরও একবার সুযোগ দেন, আপনাদের খেদমত করার। আমরা দেখাতে চাই উন্নয়ন কী।”

নিজের শাসনামলের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নির্বাচনের নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে মানুষের দুয়ারে যাবেন বলে জানান এরশাদ।

গণসংযোগে এরশাদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সল চিশতী, সুনীল শুভ রায়, খালেদ আখতার, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, আমির হোসেন ভূইয়া।

আগামী শনিবার ঢাকায় জাতীয় পার্টি তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে একটি জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করতে যাচ্ছে। সেখানে নির্বাচনকালীন প্রস্তুতি নিয়ে আরও দিক নির্দেশনা দেবেন এরশাদ।