ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেছেন, গত এপ্রিলে আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে ঢাকার পুলিশ প্রধান তাকে জানিয়েছেন।
কোটা সংস্কার নিয়ে কমিটি করার পরও কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে গত ৩০ জুন প্রথম হামলার শিকার হন আন্দোলনকারীরা।
এরপর সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চলছে। এরমধ্যে রাজশাহীতে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এক শিক্ষার্থীর পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, যে হামলায় ছাত্রলীগ নেতাদের দেখা গেছে।
হামলার পাশাপাশি আন্দোলনের সংগঠকদের অনেককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে রোববারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার শিকার হয়েছেন একদল ছাত্র-শিক্ষক।
এই প্রেক্ষাপটে রোববার বিকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানত্রেীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন ওবায়দুল কাদের।
তাকে প্রশ্ন করা হয়, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন সময়ে তিনি ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করছে। আজকেও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদকারীদের ওপর তারা হামলা করেছে। এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন।
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “দেখুন, ছাত্রলীগের এখন কমিটি নাই। ছাত্রলীগের সম্মেলনের পর এখনও কমিটি ঘোষিত হয়নি। ছাত্রলীগের নামে কি কেউ কিছু করেছে এখানে এটা আমাকে জেনে বলতে হবে। আমি শিওর না। ছাত্রলীগ নামধারী আছে কি না সেটা আমাদের দেখতে হবে।”
গত ১১ ও ১২ জুন ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কাউন্সিলের পর কমিটি ঘোষণার রেওয়াজ থাকলেও এবার তা হয়নি।
মাসখানেকের বেশি সময় পর গত ৪ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের গণভবনে ডেকে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই নতুন কমিটি ঘোষিত হবে বলে অনেকে আশা করলেও এখনও তা হয়নি।
প্রশ্ন না করা হলেও আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার নিয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
“পুলিশ কমিশনার আমাকে যা বলেছে, সেখানে এ রকম সম্পৃক্ততা নেই। পুলিশ কমিশনার আমাকে বলেছেন, তারা তাদেরকেই অ্যারেস্ট করছেন, যারা ওই দিন ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করেছেন,” বলেন তিনি।
এরমধ্যে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায় একদল মুখোশধারী যুবক।
ওই হামলায় তারা ছিলেন না বলে দাবি করে আসছেন এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা।
তবে ৩০ জুন থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পাশাপাশি তাদের নেতাদের অনেককে ধরে উপাচার্যের বাসায় ওই হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
‘তারা নিজেরাই নিজেদের মাইনাস করেছে’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে বলে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, “তারা নিজেরাই তো নিজেদের মাইনাস করে ফেলেছে। দুর্নীতি না করলে তো আর দণ্ড হত না। সাহস দেখাতে না পারা, এই ব্যর্থতাই তো তাদেরকে মাইনাস করেছে। তাদের নেগেটিভ রাজনীতির যে ব্যর্থতা, সেই ব্যর্থতাই তাদেরকে মাইনাস করেছে। সরকার মাইনাস করবে কেন?
বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে সাত ধারা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ‘আত্মঘাতী’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “সাত ধারা বাতিল করতে কি সরকার বাধ্য করেছে? খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণার আট দিন আগে হঠাৎ করে রাতের অন্ধকারে তারা এক কলমের খোচায় তাদের গঠনতন্ত্র থেকে সাত ধারা উঠিয়ে দিয়েছে। সাত ধারাটা যেভাবে বাদ দিয়েছে এটা মধ্যরাতের ‘ক্যু’, এটা বিএনপির নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেদের গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে মধ্যরাতের ‘ক্যু’।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “সাত ধারায় কী আছে- রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮, ১৯৭২ এর বলে, কোন ব্যক্তি দণ্ডিত হলে বিএনপির কোন কর্মী দণ্ডিত হলে নেতা হতে পারবেন না, এমপি হতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি উন্মাদ হলে বিএনপির কোন কর্মী নেতা হতে পারবেন না, এমপি হতে পারবেন না। তারপর হচ্ছে যদি কোন ব্যক্তি ব্যাংকে দেওলিয়া হয়, সামাজিকভাবে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত হয় তাহলে তিনি বিএনপির নেতা হতে পারবেন না, এমপি হতে পারবেন না।
“এই ধারাটা তারা মধ্যরাতে উঠিয়ে দিয়েছে। তা হলে কে কাকে মাইনাস করেছে? তাদের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। তারা এখন আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ দল।”
খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি ভোটে না এলে নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে-এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বেগম জিয়ার জন্য বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। আসলে আসবে কি আসবে না, এ নিয়ে বিএনপির নিজেদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ আসতে চাইবে কেউ চাইবে না।
“অক্টোবরের আগে বলা যাবে না আসবে কি না। তাবে আমি এইটুকু বলব, নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। ইলেকশন সময় আর স্রোতের মত কারও জন্য অপেক্ষা করবে না, কোন দলের জন্য কোন নেতার জন্য ইলেকশন অপেক্ষা করবে না। ইলেকশন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।”
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, বি এম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুর ইসলাম আমিন উপস্থিত ছিলেন।