প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তা নিয়ে কী অগ্রগতি: ফখরুল

ভারতে গিয়ে তিস্তার পানি বণ্টনসহ দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর অগ্রগতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী করেছেন, তা জানতে চেয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2018, 03:13 PM
Updated : 25 May 2018, 04:37 PM

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তি নিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ করেছে- অত্যন্ত ভালো কথা। সেই সঙ্গে আমাদের প্রশ্ন, জনগণের প্রশ্ন- আমরা আমাদের যে পাওনাগুলো রয়েছে, সমস্যাগুলো রয়েছে সেই সমস্যাগুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কথা বলছেন কি না।”

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এখনও যেসব সমস্যা আছে, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমেই তার সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে বিশ্বের কাছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘মডেল’ হিসেবে আবির্ভূত হবে। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, পরস্পরের বিকাশে সহযোগিতা করছে তা অন্যদের জন্যও একটি শিক্ষা, একটি উদাহরণ।

তাদের এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার পর সন্ধ্যায় এক ইফতার আয়োজনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের হিস্যা আদায়ের আলোচনার সম্পর্কে জানতে চাইলেন মির্জা ফখরুল।  

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখনও না হওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করেছিল তখনই তারা বলেছিল যে, এখন এটা শুধু সময়ের ব্যাপার যে আমরা তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি করতে পারব। অথচ দীর্ঘ নয় বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত তিস্তা নদীর এক ফোঁটা পানির ব্যাপারেও কোনো চুক্তি হয়নি।

“শুধু তিস্তা নয়, অভিন্ন যে ১৫৮টি নদী রয়েছে সেই নদীগুলোর হিস্যার ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, সামরিক চুক্তি হচ্ছে। সীমান্তে যে মানুষদের হত্যা করা হয় সেটাকে বাদ দিয়ে ট্রানজিট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন বন্দর নির্মিত হচ্ছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির পক্ষে তারাও।

“তবে একইসঙ্গে তার বিনিময়ে আমরা কী পাচ্ছি সেটাও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা বার বার বলছি, এভাবে জনগণকে বোকা বানিয়ে, জনগণের সাথে প্রতারণা করে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন।”

নির্বাচনী বিধি সংশোধন থেকে বিরত থাকার আহ্বান

সাংসদদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্বাচন কমিশন বিধি সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “বিধি সংশোধনে ইসির এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় নামতে দেওয়া হয় তাহলে সেখানে কিছুতেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না।”

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও জানান মির্জা ফখরুল।

‘আগে ঘরেরটা ধরুন’

দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আগে নিজের ঘরটা পরিষ্কার করুন। আপনার ঘরের মধ্যে কত জন আছেন যারা মাদকের ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত তাদের আগে নিয়ে আসুন।

“তাদের নিয়ে আসার পরে হতদরিদ্র মানুষগুলো যারা সত্যিকার অর্থে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত কি না বা তাদের যে ভয়াবহ পরিণতি বন্দুকযুদ্ধের নাম করে হত্যা করা, ক্রসফায়ার করা, বিচারবর্হিভূত হত্যা করা- সেটা আইনসম্মত হচ্ছে কি না, মানবতার বিরুদ্ধে যাচ্ছে কি না; আজকে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলের কাছে এই অভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে। এটা শুধু আরেকটি কৌশল বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সরকার একতরফা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কাজেই তাকে বাদ দিয়ে কখনো কোনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যারা বিএনপি ও ২০ দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের চিন্তা করছেন তারা অলীক চিন্তা করছেন। এদেশের মানুষ আরেকবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।”

গুলশানের ইমান্যুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে রাজনীতিবিদদের সন্মানে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার।

২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পারোয়ার, আবদুল হালিম, বিজেপির আবদুল মতিন সাউদ, খেলাফত মজলিশের মাওলানা শেখ গোলাম আজগর, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, মো. ফরিদউদ্দিন, কল্যাণ পার্টির এমএম আমিনুর রহমান, লেবার পার্টির একাংশের হামদুল্লাহ আল মেহেদি, মাহমুদ খান, ন্যাপের মোস্তফা ভুঁইয়া, মো. শহীদন্নবী ডাবলু, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ইফতার করেন।

ইফতারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, আনোয়ারা বেগম, মাওলানা রুহুল আমিন, অ্যাডভোকেট শফিউদ্দিন ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।