উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বৈরতন্ত্রের তকমা: আ. লীগ

বাংলাদেশ ‘স্বৈরতান্ত্রিক দেশ’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে জার্মান সংস্থার পর্যবেক্ষণ নাকচ করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে, সে সময় ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ এই আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2018, 06:55 PM
Updated : 24 March 2018, 07:59 PM

ক্ষমতাসীন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা সম্পূর্ণরুপে অসত্য ও অবাস্তব সংবাদ।” 

বাংলাদেশে কোথাও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে না এবং দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো নিজেদের মতো করে লিখতে পারছে দাবি করে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “কেউ কথা বলতে পারছে না এমন তো না। মূলত দেশের বর্তমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে তারা।”

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ (ফাইল ছবি)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “যারা স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল, তারাই ইর্ষান্বিত হয়ে এমন খবর ছড়াচ্ছে।”

বিশ্বের ১২৯টি দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জার্মান সংস্থা 'বেরটেলসম্যান স্টিফটুং'র করা ‘স্বৈরতান্ত্রিক দেশ’র তালিকায় বাংলাদেশের ঢোকার খবরটি শুক্রবার প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশ গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করছে না। 

এই পর্যবেক্ষণে বিএনপি নেতাদের এতদিনের অভিযোগের স্বীকৃতি মিলেছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হরণ দিবস’ হিসেবে পালন করে বিএনপি

সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া দেশের জন্য লজ্জাজনক।

“যে কথাগুলো আমরা বলে আসছিলাম, তা আজকে বিশ্বস্বীকৃত হয়েছে এবং এটার প্রতিফলন হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।”

আওয়ামী লীগ শাসনামলে বাংলাদেশ গণতন্ত্রহীন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন বিএনপি নেতারা।

তাদের অভিযোগ নাকচ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় চলছে।

বিবিসি বাংলার ওই খবর প্রকাশের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। ওই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এর মাধ্যমে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

আব্দুর রাজ্জাক

এই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আবদুর রাজ্জাক বলেন, “ওই নির্বাচনে একটা বড় দল অংশ নেয়নি। এতে করে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেটা দমন করেছে। বিরোধীরা তখন নানা ধরনের নাশকতা করতে চেয়েছিল।”

তবে ওই নির্বাচনের পর সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী দেশের বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন, সকল মৌলিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, মিডিয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। এখানে স্বৈরতান্ত্রিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবেই চলছে।

“উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিবিসি এই সংবাদ পরিবেশন করেছে।”

জাহাঙ্গীর কবির নানক

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “আমাদের মতো দেশ যখন অগ্রসরমান হয়ে উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়, তখন কিছু শক্তি দেশের স্থিতিশীল অবস্থা ও উন্নয়ন কোনোভাবে মেনে নিতে পারে না। 

“যারা এগুলো বলছে, এটা অপপ্রচার, ডাহা মিথ্যা কথা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলছে।"

গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে জনগণের জানমাল রক্ষা করা, মানুষের বাক স্বাধীনতাসহ সব সুযোগ আছে দাবি করে তিনি বলেন, “এছাড়া দেশে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখা, জঙ্গি দমন কী গণতন্ত্রের বাইরে?”