এখন দুর্নীতিই বিএনপির নীতি: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আদালতে দণ্ডিত দুর্নীতিবাজদের শীর্ষ পদে রাখার মধ্য দিয়ে বিএনপি দুর্নীতিকেই তাদের দলীয় ‘নীতি’ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2018, 02:21 PM
Updated : 28 Feb 2018, 02:33 PM

“যারা দুর্নীতিবাজকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করে, তারা জনগণের জন্য কী কাজ করবে,” প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে জনগণের উদ্দেশে এই প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা।

দুর্নীতির এই মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে বিএনপি।

মুদ্রা পাচারের মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে থাকা তারেককে এতিমখানা দুর্নীতি মামলায়ও ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বুধবার সংসদের উনিশতম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এই প্রসঙ্গটি তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রায়ের আগে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির শীর্ষপদে থাকার সুযোগ তৈরির সমালোচনাও করেন।

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া মামলার রায় বেরুনোর আগেই বিএনপি দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতিবাজদের পদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মানে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। আসামিকে দলের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে।

“যারা গঠনতন্ত্রে দুর্নীতিকে আশ্রয় দেয় আর দুর্নীতিবাজকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে তারা জনগণের জন্য কী কাজ করবে? তারা লুটপাট করতে পারবে। মানুষ খুন করতে পারবে। দুর্নীতি করতে পারবে, কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে না।”

বিএনপির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়ার সাথে সাথে আরেকজন সাজাপ্রাপ্তকে দায়িত্ব দিল। তিনি আবার দেশেও থাকে না, পলাতক। বাংলাদেশে বিএনপিতে কি একটা লোকও নেই যে যাকে দায়িত্ব দেওয়া যায়।

“অবশ্য বিএনপির প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই তো দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এই যদি রাজনৈতিক দলের অবস্থা হয়; তাহলে সেই দল দেশকে কী দেবে?”

সাজা ঘোষণার পর কারাগারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া

শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই অরফানেজটা কোথায়? ২৭ বছর আগে টাকা এসেছে। সেই টাকা নয়-ছয় করেছে। তখনকার আমলে ২ কোটি টাকার মূল্য কত ছিল? ওই টাকায় তখন ধানমণ্ডিতে ১০/১২টা ফ্ল্যাট কেনা যেত।”

খালেদা-তারেকের বিরুদ্ধে এই মামলা ও রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিএনপি নেতাদের কথার জবাবও দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তারা দুই কোটি টাকার লোভ সামলাতে পারল না। সেই এতিমদের সাহায্য না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করল। এখানে আমাদের দোষ কোথায়? এটা খুঁজে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আর মামলা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

“১০ বছর ধরে এই মামলা চলে এসেছে। সাজা দিয়েছে তো কোর্ট, এখানে সরকারের তো কিছু করার নেই। এই টাকা এতিমদের দিয়ে দিলে তো এটা হত না।”

“চোরকে চোর বলিও না, দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতিবাজ বলিও না; এটাই শিক্ষা হবে বাংলাদেশে? অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে? তা তো হবে না,” দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমাদের এমপি-মন্ত্রী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, ডেকে নিতে জিজ্ঞাস করতে পারে। আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করিও না.. করবও না। কারও দুর্নীতি প্রমাণ হলে সে সাজা পাবে।”

সংসদের এই অধিবেশনেই প্রধানমন্ত্রী এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ‘সুশীল সমাজ’র প্রতিনিধিদের ‘সার্কাসের গাধার’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা নিয়ে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেন এক অনুষ্ঠানে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন।

বুধবারের বক্তৃতায় মইনুল হোসেনের নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, “এক ভদ্রলোক এখন দেখি অনেক বড় বড় কথা বলেন.. বেশ জ্ঞানী গুণী। তিনি খুব আহত হয়েছিলেন।

“আমি দেখলাম, অনেক সময় টেলিভিশন টক’শোতে বলেন, তাদের মতো শিক্ষিত লোকদের নাকি গাধা বলা হয়েছে। আমি তো একটা গল্প বলেছি। এতে কারও যদি আঁতে লাগে, আর সে যদি নিজেকে গাধা মনে করে, আমার কিছু করার নাই।”

এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি বজলুল হুদা এবং আবদুল আজিজ পাশাকে নিয়ে মইনুল হোসেনের রাজনৈতিক দল গড়ার কথাও মনে করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা।

“সেই ভদ্রলোকও এই খুনি হুদা আর পাশাকে নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক দল করেছিল।”

এই সময় শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে বলেন, “মঞ্জু (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) ভাই ভালো বলতে পারবে।”

মইনুল হোসেনের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এনিয়ে দ্বিতীয়বার শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় রয়েছেন।

এরশাদ আমলের মন্ত্রী মঞ্জু জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান।

শেখ হাসিনা বলেন, “সেই আশির দশকে শাহরিয়ার, হুদা, পাশাকে নিয়ে .. তাদের নিয়ে রাজনৈতিক দল করে। যে লোক খুনিদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলো; তাদের পেছনে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা খরচ করেছিল।”

এই অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা নিজেই বলেন, “টাকা কিসের টাকা? ইত্তেফাকের টাকা। ইত্তেফাকটা কার? হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অর্থে ওই ইত্তেফাক আওয়ামী লীগের একটা পত্রিকা.. যেটা অবশ্য পরে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের আর কোনো অধিকার থাকে না।

মইনুল হোসেন

“সেই ইত্তেফাকের দ্বারা অর্জিত সম্পদ দিয়েই ভদ্রলোক বিদেশে ব্যারিস্টারিও পড়ে এসেছেন, সাহেব হয়ে গেছেন। ওই ইত্তেফাকের টাকা দিয়েই তাদের জৌলুস। ইত্তেফাকের টাকা দিয়েই তারা বড়লোক হয়েছেন, অর্থশালী হয়েছেন। এখন কেউ রিকশায় চড়লে হীন চোখে দেখেন। কিন্তু, টাকাটা সোহরাওয়ার্দী সাহেবের। তার ছেলেটা কী অবস্থায় আছে; সে খবরটাও রাখে না।”

ইত্তেফাক পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথাও বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মনোনয়নে মইনুলের নাম আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাঠানোর কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

“উনি আমাদের কাছে অনেকবার ধরনা দিয়েছিল উপদেষ্টা হবার জন্য। আমরা যখন পার্টি থেকে উপদেষ্টার নাম পাঠাই; তখন তার নামটাও পাঠিয়েছিলাম। তিনি উপদেষ্টা হওয়ার পর সবার আগে আমাকেই গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। আর, আমার বিরুদ্ধে মামলাটা দিয়েছিল।”

তখন বিদেশ যাওয়ার পর মইনুল ফোন করে দেশে ফিরতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন বলেও জানান শেখ হাসিনা। 

“আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে আসব। তিনি (মইনুল হোসেন) নিজে আমাকে ফোন করেছিলেন- ‘থাক বুনডি তুমি আর আইসো না’। বরিশাল-ফরিদপুরে ছোট বোনকে বুনডি বলে ডাকে।”

সেনা নিয়ন্ত্রিত সেই সরকারে মইনুলের থাকার দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “তার মুখে এখন গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। বাংলাদেশের জন্য এটাই হল দুর্ভাগ্যের।”