নিজাম হাজারীকে নিয়ে সেই রিট আবেদনের শুনানি শুরু

ফেনী-২ আসনে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদনের শুনানি হাই কোর্টে শুরু হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2018, 03:55 PM
Updated : 23 Jan 2018, 03:55 PM

সাত দিন আগে হাই কোর্টের একটির পর একটি বেঞ্চ বিব্রতবোধ করার পর মঙ্গলবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের একক বেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়।

রিট আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সত্যরঞ্জন মণ্ডল। নিজাম হাজারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। বুধবারও এর শুনানি হবে। 

সত্যরঞ্জন মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টের একের পর একক বেঞ্চ শুনানি গ্রহণে বিব্রত হওয়ায় এ রিট আবেদনটির নিষ্পত্তি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল। মামলাটি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে মোট আটবার বিব্রত বোধ করে আদালত।

গত ১৫ জানুয়ারি এ মামলার শুনানি নিতে বিব্রত বোধ করেছিলেন বিচারপতি ফরিদ আহমেদের একক বেঞ্চ।

সত্যরঞ্জন জানান, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরে রায়ের পর মামলাটি বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারের বেঞ্চে গেলে মামলাটি শুনতে তিনি বিব্রতবোধ করেন। পরবর্তীতে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার একক বেঞ্চে পাঠালে এই বিচারপতিও মামলাটি শুনতে বিব্রতবোধ করেন।

এরপর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের একক বেঞ্চে পাঠালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এরপর বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমানের একক বেঞ্চে পাঠানো হয়। এই বিচারপতিও বিব্রতবোধ করলে মামলাটি বিচারপতি ফরিদ আহমেদের একক বেঞ্চে পাঠানো হয়েছিল।

হাই কোর্টের রায়ের আগে তিনবার এবং রায়ের পর পাঁচবার বিব্রত হয়েছে হাই কোর্ট। এছাড়া একবার হাই কোর্টের একটি বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন রিট আবেদনকারী ফেনীর যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন ভুঁইয়া।

‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর এমপি পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত।

রিট আবেদনকারীর যুক্তি, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তাহলে মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।

২০০০ সালের ১৬ অগাস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় দুটি ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর, যা আপিলেও বহাল থাকে।

নিজাম উদ্দিন হাজারী

সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলেও তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাংসদ হয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয় রিট আবেদনে।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করে।

 নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ববলে ওই আসনে সংসদ সদস্য পদে আছেন এবং ওই আসনটি কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে৷ পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনাও দেয় আদালত।

ওই রুলের উপর শুনানি নিতে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের এক বিচারপতি এবং পরে ২ ডিসেম্বর অন্য একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিব্রতবোধ করে।

 প্রধান বিচারপতি এরপর বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে পাঠান। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি হাই কোর্টে রুলের উপর শুনানি শুরু হয়।

শুনানিকালে হাই কোর্ট নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। সেইসঙ্গে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলার রায় ও নথিপত্র দাখিল করতে বলে।

 এরপর ওই বছরের ২৬ মে অন্য এক আদেশে হাই কোর্ট অস্ত্র মামলায় নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয় তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি-প্রিজন্স) নির্দেশ দেয়।

এ নির্দেশনা অনুসারে আইজি-প্রিজন্সের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছরের কারাদণ্ডের মধ্যে নিজাম হাজারী সাজা খেটেছেন ৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন ১ বছর ৮ মাস ২৫ (৬২৫ দিন)। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন ৭ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। এখনও সাজা খাটা বাকি আছে ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন।

এরপর ২০১৬ সালের ৩ অগাস্ট এই রিটের রুলের ওপর শুনানি শেষ করে আদালত ১৭ অগাস্ট রায়ের দিন ঠিক করে দিলেও ওইদিন নতুন একটি নথি চাওয়া হলে রায় পিছিয়ে যায় ২৩ অগাস্ট।

২৩ অগাস্ট আদালতে ফের শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবীরা। ‘রক্তদান করে’ নিজাম হাজারী কারাবাস রেয়াতের অধিকারী হয়েছেন বলে তার আইনজীবীরা সেদিন আদালতে যুক্তি দেন।

শুনানির পর আদালত ৩০ অগাস্ট রায় দেওয়া শুরু করলেও নিজাম হাজারীর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন সেদিন বলেন, নিজাম হাজারী কারাগারে থাকার সময় মোট ১৩ বার রক্ত দিয়েছিলেন। যার বিপরীতে তিনি ৪৮৬ দিনের কারাবাস থেকে রেয়াত পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন। এটা ধরা হলে তার সাজার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় তিনি কারাগারে ছিলেন।

তাদের ওই যুক্তির পর ৩১ অগাস্ট আদালত নতুন প্রতিবেদন চায়। নিজাম হাজারী কারাবাসকালে কত ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন, এর ফলে কতদিন কারাবাস রেয়াত পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন, ৩০ দিনের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে দিতে বলা হয় কারা কর্তৃপক্ষকে।

৩ নভেম্বর আবার এ বিষয়ে শুনানি শুরু হলে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানায়, নিজাম হাজারীর রক্তদানের বিষয়ে কোনো নথি তাদের কাছে নেই।

এরপর আরও কয়েক দফা রায়ের তারিখ পেছনোর পর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করে হাই কোর্ট।

কিন্তু বিভক্ত রায়ের কারণে নিয়ম অনুসারে রিট আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য তিনি একক বেঞ্চ গঠন করে দেন।