পাল্টা সমাবেশ করছি না: ওবায়দুল কাদের

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি উদযাপনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ নিয়ে সঠিক সংবাদ প্রকাশ করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2017, 03:03 PM
Updated : 13 Nov 2017, 03:03 PM

সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সমাবেশ নিয়ে আমরা কোনো রাজনীতি করছি না, আমাদের সমাবেশ পাল্টা-পাল্টি না।”

রোববার সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির জনসভার প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, “গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসন সমাবেশ করেছেন। এখন আমরা ১৮ তারিখে সমাবেশ করব। এখানে দুই-একদিনের মধ্যে আমি দেখব অনেকে লিখছেন, আমরা পাল্টা সমাবেশ দিয়েছি। প্লিজ আমরা পাল্টা-পাল্টি কোনো সমাবেশে যাচ্ছি না।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত হওয়ায় সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ, যার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্মৃতি-বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী  উদ্যানে (রেসকোর্স ময়দান) নাগরিক সমাবেশ।

ওবায়দুল কাদের জানান, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, “যা ছিল বাঙালির সম্পদ সেটা আজকে বিশ্বের সম্পদ; যা ছিল বাঙালির প্রামাণ্য দলিল তা আজকে বিশ্বের হেরিটেজ, এটা নিয়ে আমরা কোনো রাজনীতি করছি না।

“এখানে যারা আছেন এদের মধ্যে অনেকেই এটাকে পাল্টা-পাল্টি সমাবেশ হিসেবে দেখছেন, এটা দেখবেন না। কারণ বিএনপি সমাবেশের তারিখ ঘোষণার আগেই আমরা বঙ্গবন্ধুর সম্মানে এই সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছি।”

বিএনপি নেতাদের মুখে গুণগত রাজনীতির কথা ‘ভুতের মূখে রামনাম’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, “এই দেশে যারা নষ্ট রাজনীতির সূচনা করেছে, এই দেশে যারা সাম্প্রদায়িক শক্তির শ্রেষ্ঠ উৎস, এই দেশে যারা জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে, তারা যদি বলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন করবে, এটা ভুতের মুখে রামনাম ছাড়া আর কিছু না।”

“রাজনীতির গুণগত মান পরিবর্তন করবে তারা? যারা আগুনে শতশত মানুষ পুড়িয়েছে, প্রতিহিংসা বিদ্বেষে যারা মানুষকে আগুনে পুড়িয়েছে, তারা বলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনবে।” 

সাংবাদিকদের দুই সংগঠনের এই আলোচনায় সাংবাদিকদেরই সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের।

“সাংবাদিকরা এখন এই পেশাটাকে যে কি অবস্থায় নিয়ে গেছে। আমার এলাকার আশপাশের এলাকার এক সাংবাদিক আছে, আমি জানি না সে এক লাইন শুদ্ধ ভাষায় বাংলা লিখতে পারে কি না। সে একটি কাগজের সাংবাদিক। আজকে পেশাটাকে যে কি অবস্থায় আপনারা নিয়ে গেছেন, ব্যাঙের ছাতার মত মিডিয়া সৃষ্টি হয়েছে।”

নিজেও এক সময় সাংবাদিক ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা ভালো সাংবাদিক, প্রফেশনাল কাজ করে, পড়াশোনা করে, সাংবাদিকতা করে তাদের নিয়ে আসুন।”

তথ্যমন্ত্রীকে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখন সাংবাদিকরা যা পায় তাতে চলে না, সাংবাদিকদের বাসায় বসে পড়াশোনা করার জন্য তো একটা মুড লাগে; তাদের ইন্সপিরেশেন তো দরকার। আমার পেটে নেই ভাত, সংসারের ছেলে মেয়েদের খরচ দিতে পারছি না, বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি না। এ রকম করে কিভাবে ভালো সাংবাদিকতা করবে?

“আমি অগেও বলেছি, মাননীয় তথ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে সাংবাদিকদের বিষয়গুলো দেখবেন, সাংবাদিকদের সুবিধাগুলো দেখবেন। একটা মানবিক বিষয় আছে এই মানবিক দৃষ্টিকোনটাও উপেক্ষিত নয়, কেন তারা সংঘাতের দিকে যাবে। সাংবাদিকরা তো ভিন্ন কোনো গ্রহের বাসিন্দা না। তাদের সাথে বসে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। আমি বলব যুক্তিসংগত সমাধান করে দিন।”

বেশিরভাগ সাংবাদিক এখন কপি-পেস্ট করছে বলে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সাংবাদিকদের মধ্যে যা দেখব তা লিখব- এটা কি আছে? একজন রিপোর্ট লিখেন অন্যদের কাছে শুনে শুনে। এখন দেখা যাচ্ছে একজন গেছেন অন্য কেউ যাননি তার কাছ থেকে নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছে। পরের দিন দেখা যায় এই রিপোর্ট সব পত্রিকায়। যখন তারা নিজে যান না, তখন অন্যের কাছ থেকে নেওয়া রিপোর্টটি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে রিপোর্ট তৈরি করেন। এই কাজটাই এখন হচ্ছে।”

সাংবাদিক নেতাদের মফস্বল সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে তাদের দেখার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, “আমি অনুরোধ করব প্লিজ মফস্বলে যান, ওখানে কোনো সংবাদিকতা নেই।”

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্বীকৃতি পাওয়ায় সাংবাদিকদের আনন্দ সম্মীলনী আয়োজন করে।

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিএসএমএমইউর উপাচার্য কামরুল হাসান খান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।