রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনীতি করার প্রশ্নই আসে না: মোশাররফ

রোহিঙ্গা সঙ্কটের ঘটনাকে ইস্যু করে বিএনপি ‘নোংরা রাজনীতির খেলায়’ মেতেছে বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ নাকচ করেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2017, 09:44 AM
Updated : 9 Sept 2017, 10:06 AM

শনিবার সকালে রাজধানীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক যে বক্তব্য রেখেছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সারা পৃথিবী দেখছে যে, রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য আজকে মিয়ানমার সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।

“আমরা শুধু এদেশের মানুষের মনে কথাকে কালকে (শুক্রবার) মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিধ্বনি করেছি, এখানে নোংরা রাজনীতির প্রশ্নই উঠে না।”

গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর পাল্টা সেনা অভিযান শুরু পালিয়ে বাংলাদেশমুখী হয়েছে মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার এই নৃ-গোষ্ঠী।

তিন দশক ধরে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বহন করে আসা বাংলাদেশের সরকার নতুন করে শরণার্থী নিতে অনাগ্রহের কথা বললেও গত দুই সপ্তাহে অন্তত ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে বলে জাতিসংঘের তথ্য।

মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং বাংলাদেশে তাদের আশ্রয় দেওয়ার দাবিতে শুক্রবার রাজধানীসহ জেলায় জেলায় এক ঘন্টার মানববন্ধন কর্মসূচি করে বিএনপি।

শুক্রবার মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখানে এক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নোংরা রাজনীতি করার অভিযোগ আনেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা রাজনীতির নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন। আপনাকে ও আপনার দলকে বলব, রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইস্যু সৃষ্টি করে রাজনীতির নোংরা খেলা থেকে বিরত থাকুন।”

জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ বলেন, “বরং সরকার আজকে ঠিক মিয়ানমার সরকারের মতোই এই বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানা কৌশল, কূটকৌশল গ্রহণ করেছে। যেটা এই দেশের জনগণ মোটেই পছন্দ করছে না।

“আমরা মনে করি, আমরা যা বলছি, সারা পৃথিবী যা দেখছে- এটাই সত্য। আর মিয়ানমার যা বলছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের পক্ষে সাফাই গাইছে-এটা সঠিক নয়।”

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের নিপীড়নের প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “তারা (মিয়ানমার সরকার) একটা জাতি গোষ্ঠীকে নির্মূল করে দেওয়ার জন্য সরকারিভাবে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এটাকে কখনো আমরা সমর্থন করতে পারি না।”

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমাদের ‍মুক্তিযুদ্ধের সময়েও কিন্তু আমাদের এদেশ থেকে বহু শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। কিন্তু যারা আমাদের বিরুদ্ধে ছিল, তারা ওই সময়ে বলেছিল- এখানে এটা কোনো বিষয় না, এরা অযথা বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

“কোনো দেশের নাগরিক তার ভিটেমাটি, তার সহায়-সম্পত্তি ছেড়ে এভাবে পালিয়ে আসতে পারে- সেখানে যদি সেইভাবে একটা ধ্বংসাত্মক এবং সর্বাত্মক একটা হত্যাযজ্ঞ না হয় তাহলে বাড়ি-ঘর ছেড়ে তারা পালিয়ে আসতে পারে না। এটাই প্রমাণ যে, আমরাই সঠিক কথা বলছি, সরকারই বরং ধামাচাপা দিচ্ছে।”

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আর কোনো কর্মসূচি বিএনপি দেবে কিনা প্রশ্ন করা হলে স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হলে যথা সময়ে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে এদেশের জনগণের মনোভাব প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা চাই এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের অধিবাসী… সেখানে তাদের জন্মগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

“রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে, তারা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে আসছে। তাদের সাময়িকভাবে এখানে আশ্রয় দিয়ে পরর্বতীকালে তাদেরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে, তারা যেন তাদের নাগরিকত্ব পায় সেজন্য সরকারকে যথাযথ কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে খন্দকার মোশাররফ সকাল সাড়ে ১০টায় শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে গিয়ে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

এ সময়ে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সহসভাপতি জেবা খান যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানসহ কয়েকশ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

পরে নেতা-কর্মীরা প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত অংশ নেয়।