নির্বাচন কমিশন গঠনে বাছাই কমিটিতে কারা স্থান পেতে পারেন, তার একটি তালিকাও রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছে দলটি। তবে সেই নাম প্রকাশ করা হয়নি।
বুধবার বঙ্গভবনের দরবার হলে এই আলোচনায় ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, শাহাদাত হোসেন সেলিম, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল করিম আব্বাসী, আবু ইউসুফ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, আবদুল গণি, কামাল উদ্দিন মোস্তফা।
এর আগে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে বঙ্গভবনে যায় এলডিপির প্রতিনিধিদল।
এলডিপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
আধাঘণ্টা সংলাপের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের সামনে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
“প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্রে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।”
নির্বাচন কমিশন গঠনে আলোচনায় এলডিপিকে আমন্ত্রণ জানানোয় রাষ্ট্রপতির প্রতি অলি আহমদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি গঠনে আলোচনা শুরু করেন রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ। এরই মধ্যে বিএনপিসহ তিনটি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছেন রাষ্ট্রপতি। বুধবার কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সঙ্গেও বসার কথা রয়েছে তার।
‘রাষ্ট্রপতির অবস্থানকে কাজে লাগাতে বলেছি’
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে বঙ্গভবনের গেইটের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এলডিপির প্রধান অলি আহমদ।
তিনি বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ১৭টা প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা বাছাই কমিটির কথা বলেছি, যিনি আহ্বায়ক হবেন তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি হবেন, যার কোনো বির্তক থাকবে না।
“যিনি কখনও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে ছিলেন না, লাভজনক পদে ছিলেন না এমন একজনকে বাছাই কমিটির আহ্বায়ক করার কথা বলেছি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদের বাছাই কমিটিতে আনতে হবে।”
এলডিপির উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব
১. নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা।
২. সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন।
৩. নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন।
৪. নির্বাচন কমিশনারদের ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ, নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিগত একাগ্রতা ও সততা, অন্য অফিসে নিয়োগে বিধি-নিষেধ, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকা নিশ্চিত করা।
৫.নির্বাচনকালীন সময়ে প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েন ও তাদের পুলিশের ন্যায় ক্ষমতা প্রদান প্রভৃতি।
এলডিপির প্রস্তাবি বাছাই কমিটিতে কারা রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা এখন বলা যাবে না।”
অলি আহমদ বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সবার সাথে আলোচনা করে তিনি এ বিষয়ে কর্মপন্থা ঠিক করবেন।”
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক ফলোপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি আমাদের অত্যন্ত পুরনো একজন বন্ধু মানুষ। ১৯৭৯ সাল থেকে সংসদে থেকে এক সাথে কাজ করেছি। একটা পারিবারিক সম্পর্ক আছে। তিনি খুব ভালো লোক। তাকে নিয়ে বাংলাদেশে কোনো বির্তক নাই। তাকে তার পজিশনটা কাজে লাগাতে বলেছি।”
আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে বসবেন রাষ্ট্রপতি।
এছাড়া ২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, ২৯ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ ন্যশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এবং একই দিন সাড়ে ৪টায় ইসলামী ঐক্যজোট, ২ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় জাতীয় পার্টি (জেপি), ৩ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে সংলাপের সূচি রয়েছে।