হাসিনাকে বলেছিলাম, বিচার না হলে আবার হবে: সেলিম

সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এই ঘটনার বিচার না হলে পুনরাবৃত্তির শঙ্কার কথা জানিয়ে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2016, 12:23 PM
Updated : 21 August 2016, 12:30 PM

২০০১ সালে পল্টন ময়দানে সিপিবির জনসভার তিন বছর বাদেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, যাতে ২৪ জন নিহত হন।

এরপর আরও জঙ্গি হামলার ধারাবাহিকতায় গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত‌্যা করা হয়।   

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি। ঢাকার আদালতে এখনও তা সাক্ষ‌্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।

শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বর্ষপূর্তির দিন ২১ অগাস্ট রোববার আদালতে জবানবন্দিতে সিপিবি সভাপতি সেলিম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখার বিষয়টি তুলে ধরেন।  

তিনি বলেন, “ঘটনার পরে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে কিছু ভিডিও ফুটেজ এবং আরও কিছু স্থির চিত্র হস্তান্তর করি। তাকে আমরা সতর্ক করি যে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।”

আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাদের এক সময়ের রাজনৈতিক মিত্র সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনার তদন্তে শুরুতে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসেনি।

বিএনপি শাসনামলে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনাটিও ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। 

পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তদন্তে এসব ঘটনায় জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। তারপর অভিযোগপত্র দেওয়ার মাধ‌্যমে বিচার শুরু হয়।

২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান এই মামলারও আসামি। তিনি রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলারও আসামি।

২০০৪ সালে এক রাজনৈতিক বৈঠকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সিপিবি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (বামে দ্বিতীয়)- ফাইল ছবি

সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা ও  বিস্ফোরকের দুই মামলায় ঢাকার তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক নূরুন্নাহার বেগমের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ‌্য দেন সিপিবির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি সেলিম।

তিনি বলেন, “কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী চক্রান্ত করেছে। আমাদের পার্টিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। গণতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার কার্যক্রম নস‌্যাৎ করার জন্য চেষ্টা করছে অনেক রকমের গোষ্ঠী, দল।  ওই দিনের হামলাও সে উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছিল।”

জবানবন্দি দেওয়ার পর সিপিবি সভাপতিকে জেরা করেন আসামি মুফতি মঈন ও মওলানা সাব্বিরের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ।

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পালিক প্রসিকিউটর সালাউদ্দিন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে।

সিপিবির তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মনজরুল আহসান খানের করা এই মামলার আসামিদের মধ‌্যে পাঁচজন কারাগারে রয়েছেন, পলাতক আছেন আটজন।

১৩ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান ছাড়া রয়েছেন মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মশিউর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম।

মুফতি হান্নান, মুফতি মঈন, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শেখ ফরিদ  কারাবন্দি আছেন। তাদের রোববার আদালতে হাজির করা হয়।

সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন। তারা হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হিমাংশু মন্ডল, রূপসা উপজেলার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানী জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম, মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস সাহা।