মির্জা ফখরুল অবশেষে বিএনপির মহাসচিব

পাঁচ বছর ‘ভারপ্রাপ্ত’ থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব চালিয়ে আসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অবশেষে ‘মহাসচিব’ করে নিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2016, 05:39 AM
Updated : 30 March 2016, 01:57 PM

২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর দুই দফায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে গিয়েও সাফল্যের দেখা না পাওয়া এ দলটির সাত যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে রুহুল কবির রিজভীও পদোন্নতি পেয়েছেন, হয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

আর কোষাধ্যক্ষ পদে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহার ওপরই আস্থা রেখেছেন বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়া।

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের ১১ দিন পর বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তিন পদে বিএনপি চেয়ারপারসনের মনোনয়নের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। খালেদার পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান রিজভী।       

গত ১৯ মার্চ ঢাকার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশে আয়োজিত বিএনপির কাউন্সিলে চেয়ারপারসন ও জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের পদে খালেদা ও তারেক রহমানকে নির্বাচিত করা হয়। সেখানেই কাউন্সিলররা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব চেয়ারপারসনকে দেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা বলা থাকলেও গত কয়েকটি কাউন্সিলেও দেখা গেছে একই চিত্র। কাউন্সিলে কমিটি ঘোষণা না করে অনেক পরে সেই ঘোষণা এসেছে চেয়ারপারসনের দপ্তর থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সকল সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছেন, ক্ষমতা দিয়েছেন, তিনিই জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করবেন। সেই জাতীয় কাউন্সিলরদের দেওয়া ক্ষমতাবলে চেয়ারপারসন জাতীয় নির্বাহী কমিটির কিছু পদে নেতৃবৃন্দকে মনোনয়ন দিয়েছেন।”

এরপর তিন পদে চেয়ারপারসনের মনোনীত তিনজনের নাম ঘোষণা করে রিজভী বলেন, “আমি আপাতত এই তিনটি নাম ঘোষণা করলাম। পরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য পদে নেতৃবৃন্দের নাম ঘোষণা করব।”

মূলত এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই কার্যক্রম শুরু করল বিএনপি নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি।

তিন মনোনয়ন

৩৮৬ সদস্যের আগের নির্বাহী কমিটি যে এবার কলেবরে বড় হচ্ছে, সে ইংগিত আগেই দিয়ে রেখেছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদনের পাশাপাশি এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ এক পদে থাকার বিধান যুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা মির্জা ফখরুল ১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের চাকরি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চার দলীয় জোট সরকারের আমলে প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয়ে এবং পরে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০১১ সালের ১৬ মার্চ বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা ফখরুলকে দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব।

এরপর দীর্ঘ সময় বিএনপিতে পূর্ণ মহাসচিব না থাকায় খালেদাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কটাক্ষও শুনতে হয়েছে। পাঁচ বছর পর মির্জা ফখরুলকেই বিএনপির সপ্তম মহাসচিব করা হলো।

গত কমিটিতে রুহুল কবির রিজভী দলের যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন। এবার তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হলেন।

খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনতে এই পদটি সৃষ্টি করা হয় ২০০২ সালের দিকে।

২০০৯ সালে ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম কাউন্সিলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের নতুন পদ তৈরি করে তারেককে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয় ফখরুলকে।

খালেদা জিয়া ওই সময়ই কোষাধ্যক্ষ পদে মিজানুর রহমান সিনহাকে আনেন, যিনি ২০০১-২০০৬ মেয়াদের চার দলীয় জোট সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

সপ্তম মহাসচিব

১৯৭৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠার সময় তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলের প্রথম মহাসচিব করেছিলেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। এরপর ১৯৮৬ সালের ১৭ জানুয়ারি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেন।

পরের বছর ১৭ মার্চ মহাসচিব পদে আসেন কে এম ওবায়দুর রহমান। এরপর ১৯৮৮ সালের ২২ অগাস্ট তাকে বহিষ্কার করে খালেদা জিয়া মহাসচিব করেন আবদুস সালাম তালুকদারকে।

১৯৯৬ সালের জুনে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপির ভরাডুবির পর সালাম তালুকদার পদত্যাগ করলে মহাসচিব পদে আসেন আবদুল মান্নান ভূইয়া।

জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালে কারাবন্দি হওয়ার আগ মুহূর্তে খালেদা জিয়া টানা ১১ বছর মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে ওই পদে আনেন।

২০১১ সালে ১৬ মার্চ খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর আবারও একজন মহাসচিব পেল বিএনপি।