দলের কাউন্সিলে দেশ পরিচালনার রূপরেখা দিলেন খালেদা

দলের কাউন্সিলে দেশ পরিচালনার রূপরেখা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে দেশবাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2016, 10:59 AM
Updated : 19 March 2016, 10:59 AM

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য তুলে ধরে সরকার প্রধানের দায়িত্বে ভারসাম্য আনার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

পাঁচ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ভোট বর্জন করে সংসদ থেকেও ছিটকে পড়া বিএনপির উঠে দাঁড়ানো নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংশয়ের মধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষমতায় ফেরার আশা দেখালেন খালেদা।

“আপনারা জেগে ‍উঠুন, ঐক্যবদ্ধ হউন। আপনাদের যে অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তা ছিনিয়ে নিন,” দেশবাসীর উদ্দেশে এই আহ্বান রেখে তিনি নেতা-কর্মীদের বলেন, “অন্ধকারের পর্দা দুলে উঠেছে। অচিরেই আলো আসবে। ভবিষ্যৎ আমাদেরই ইনশাল্লাহ।”

পঞ্চম কাউন্সিলের ছয় বছর পর শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল উদ্বোধন করেন খালেদা। এর আগেই দলের শীর্ষ পদে তার পাশাপাশি ছেলে তারেক রহমানও জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনর্নির্বাচিত হন।

সকাল ১১টার জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কাউন্সিল উদ্বোধন করেন খালেদা। এরপর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দলীয় নেতা ও বিদেশি প্রতিনিধিদের পর বক্তব্য রাখেন তিনি।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আমি সকলকে আশ্বাস দিতে চাই, আগামীতে বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে আল্লাহর মেহেরবানীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কাউকেই অহেতুক হেনস্তার শিকার হতে হবে না। আমরা কারও প্রতি অবিচার করব না।”

আওয়ামী লীগ ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশকে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসেছিল আওয়ামী লীগ। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে।

পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন

এর মধ্যেই ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে ‘ভিশন-২০৩০’ কর্মপরিকল্পনার খসড়া দলের কাউন্সিলে উপস্থাপন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।

“আমরা সঙ্কট নিরসন করে দেশ-জাতিকে এগিয়ে নিয়ে সমৃদ্ধ দেশ এবং আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষে ভিশন-২০৩০ শিরোনামে একটি বিস্তৃত কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি।”

“২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ডলার। এর জন্য বিএনপি বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ডাবল ডিজিটে উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”

‘ভিশন-২০৩০’ এর আলোকেই আগামীতে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার হবে বলে জানান চেয়ারপারসন।

বর্তমানে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে অভিযোগ করে আসা বিএনপির চেয়ারপারসন ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব খর্ব করে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার কথা বলেছেন। তবে তা কী প্রক্রিয়ায় হবে,তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

জাতীয় সংসদকে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে  তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কার করে বিভিন্ন সম্প্রদায়, প্রান্তিক গোষ্ঠি ও নেতৃস্থানীয় পেশাজীবীদের আইনসভায় আনতে চান তিনি।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণের পাশাপাশি গণভোট প্রথা চালু, সকল কালা কানুন বাতিল, দলীয়করণমুক্ত দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন খালেদা।

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতি সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

.দলীয় প্রতীকে আচ্ছাদিত এক কর্মী

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় ভোট বর্জনের পর আন্দোলন চালিয়েও আওয়ামী লীগকে হটাতে ব্যর্থ হয়ে মামলায় জেরবার বিএনপি এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার আশা করছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিটি পুনরায় তুলে ধরে তা নিয়ে আলোচনায় আসতে সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানান খালেদা।

“শুধু আমরা নই, প্রায় সকলেই বাংলাদেশে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার চায়। এর জন্য যত দ্রুত সম্ভব সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রয়োজন। কীভাবে সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে, সে ব্যাপারে সকলের আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা সমাধানে পৌঁছাতে চাই।”

বিএনপির এই চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমরা কেবল ক্ষমতায় যাবার উদ্দেশে একটি নির্বাচন বা সংলাপ চাইছি না। আমাদের উদ্দেশ্য দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের সম্মতিতে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা।”

বাংলাদেশকে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান খালেদা।

কাউন্সিলে নেতা-কর্মীদের ঢল

“বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা না থাকার মধ্যে বেহেশত ও দোজখের মতো দুস্তর ব্যবধান ‍সৃষ্টি হয়েছে। স্বর্গচ্যুত হয়ে নরক যন্ত্রণা ভোগের ভয়ে তাই অনেকে ক্ষমতা ছড়িতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে কিংবা ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে সব রকমের অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে।”

“সরকার ও বিরোধী দলকে মর্যাদা ও অধিকারের দিক থেকে আমরা যাতে আরও কাছাকাছি আনতে পারি, তার জন্য আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে একটা পন্থা ও প্রক্রিয়াও উদ্ভাবন করতে হবে,” বলেন তিনি।

সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “বাংলাদেশের অসহায় ও হতাশ জনগণ আমাদের কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে আছে।

“আপনারা এই কাউন্সিল শেষে দিক-নির্দেশনা নিয়ে সারাদেশে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বেন, তাদের ঐক্যবদ্ধ করবেন। তার জন্য নিজেরা আগে ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং সংগঠনককে সুসংবদ্ধ করবেন। তাহলেই আমরা অজেয় শক্তিতে পরিণত হব।”