তিনি বলেছেন, দলের নেতা-কর্মীদের ‘উৎসাহ’ দিতেই ইসির ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন এরশাদ।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদ বলেন, “নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়েছে। আশা করি তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন।”
গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনে সিইসির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, “নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নাই। এ ব্যাপারে যেটুকু সন্দেহ ছিল আজ তা দৃঢ় হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা যেন পৌর নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নেন সেজন্য একজন নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন। তার স্থান প্রধানমন্ত্রীর উপরে, এটা তিনি ভুলে গেছেন। তিনি তার সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।”
দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বক্তব্যের পার্থক্য নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রওশন বলেন, “আসলে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে নেতা-কর্মীদের উৎসাহিত করতে অনেক কিছু বলতে হয়। পার্টি চাঙ্গা করতে সেগুলো বলেছেন। ইসিকে উনি প্রশ্নবিদ্ধ করেননি।”
তাহলে এরশাদ ও রওশনের বক্তব্যের মধ্যে কোনটি দলীয় বক্তব্য হিসেবে ধরতে হবে- এমন প্রশ্নে জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, “স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে উনি কথা বলেছেন। ইসিতো স্বাধীন- তাহলে আবার সরকারের সহযোগিতা চাইবে কেন। ”
রওশন বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছি। জনগণ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পাবে এবং গ্রহণযোগ্য প্রার্থীরা যাতে নির্বাচিত হতে পারে সেটাই আমাদের দাবি।”
বুধবার দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক ভোট হচ্ছে, যাতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ৭৪ পৌরসভায় লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দল হলেও তাদের তিন নেতা সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকায় সমালোচনা রয়েছে। রওশনের বিরোধী দলীয় নেতা এবং এরশাদের প্রধানমন্ত্রীর দূতের পদে থাকা নিয়েও রাজনেতিক অঙ্গনে কথা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
এক প্রশ্নের জবাবে রওশন সাংবাদিকদের বলেন, ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কোনো সংঘর্ষ হয়নি। যা হচ্ছে সেটা “আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর, বিএনপির সঙ্গে তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীর।”
জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে- এরশাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে রওশন বলেন, “ভয়-ভীতি যারা দিচ্ছে তারা সরকারের। যেহেতু তারা সরকারে আছে সেজন্য ভয় দেখাচ্ছে। প্রত্যেকটি নির্বাচনেই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে।”
সরে দাঁড়ানোর কারণ সম্পর্কে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ছোট দল’ হওয়ায় প্রার্থীদের ‘আর্থিক স্বচ্ছলতার’ দিকটিও ভাবতে হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে মাঝপথে সরে দাঁড়াবেন কীনা- এ প্রশ্নে রওশন বলেন, “নির্বাচনে দাঁড়ায় কেন? জেতার জন্য। নির্বাচন থেকে সরব না। নির্বাচনকে প্রহসন বলা যাবে না। এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।”
খালেদার বক্তব্য প্রসঙ্গে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যরও সমালোচনা করেন রওশন এরশাদ।
তিনি বলেন, “এতো দিন পর শহীদের সংখ্যা নিয়ে যদি কথা বলেন- তাহলে তো নিজের অস্তিত্বই নেই। সেটেলড ইস্যু নিয়ে বিতর্ক করা উচিত হয়নি। এটা দুঃখজনক।”
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “আমরা সবাইতো বাংলাদেশ চেয়েছি। ৩০ লাখ শহীদ নিয়ে কথা বলাটা সামান্য ব্যাপার না। এ ধরনের বক্তব্য আসা উচিত হয়নি।”
অন্যদের মধ্যে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কাজী ফিরোজ রশীদ ফখরুল ইমাম, ইয়াহিয়া চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।